ব্যক্তি পর্যায়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো ও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চট্টগ্রামের সন্তান বাবর আলী পায়ে হেঁটে ঘুরছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। প্লাস্টিককে ‘না’ বলার মিশনে তিনি তেঁতুলিয়া থেকে পায়ে হেঁটে রোববার পর্যন্ত মোট ৬২টি জেলায় প্রচারণা চালিয়েছেন। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) কাপ্তাই ও বান্দরবান হয়ে কক্সবাজার গিয়ে শেষ করবেন ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’-এর বিরুদ্ধে মিশন স্ট্রলিং ৬৪ (Mission Strolling 64)।
এ বিষয়ে তরুণ চিকিৎসক বাবর আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী পড়ে জয়িতাদের সাথে কল্পনায় হারিয়ে যেতাম ভারত-নেপাল সীমান্তের সেই সুবিশাল পাহাড়ের রাজ্যে। মানসপটে হিমালয়ের সেইসব পাহাড়ের ছবি আঁকতে আঁকতেই বান্দরবান দিয়ে ২০১০ সাল থেকে শুরু পাহাড়ে যাওয়া। ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতে। সাফল্য আসা শুরু প্রথম বছর থেকেই। এই বছর তিনটি ৬ হাজার মিটার পর্বত অভিযান শেষ করেছি সফলতার সাথে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি সমুদ্র নিয়ে এক গবেষণায় ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের মোট ওজনের চেয়ে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির মোট ওজন বেশি হবে। প্রকৃতির সুরক্ষায়, জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে আমার এই পথচলা। ৬২ জেলায় আমি অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আগামী শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ২৫ অক্টোবর পঞ্চগড়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করা আমার ৬৪ জেলা পায়ে হাঁটা।
প্রসংগত, ব্যবহারিক জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’-এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এরমধ্যে বিভিন্ন টাইপের স্ট্র, প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম প্লেট, প্লাস্টিকের চা/কফির কাপ, কফি কাপের ঢাকনা, পানি/কোল্ড ড্রিংকসের বোতল উল্লেখযোগ্য।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন, প্লাস্টিকে তৈরি জিনিস অপচনশীল হওয়ায় এসব পরিবেশে থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। দুনিয়াজুড়ে যত প্লাস্টিক পণ্য আছে তার মাত্র ১০-১২ ভাগ রিসাইকেল করা যায়। ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’—এর ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারের পরই এদের জায়গা হচ্ছে ময়লার ভাগাড় কিংবা খাল-নালা তারপর নদীপথ হয়ে চূড়ান্তভাবে যাচ্ছে সাগরে।
সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকার নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যায় এসব প্লাস্টিকে। চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্লাস্টিকের অত্যাচারে। ঠিক এই সময়টাতে যদি আমরা সচেতন হই, প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্ক হই তবে প্রাণ ফিরে পাবে কর্ণফুলী ও প্রকৃতি।
সাগরের প্রাণিরা প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র অংশগুলো গ্রহণ করলে সেটা পরবর্তীতে আবার জায়গা করে নিচ্ছে মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলে। ডিসকভারি, অ্যানিমেল প্ল্যান্টসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টরিতে দেখা যায় প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বন্যপ্রাণি মারা যায়।
উল্লেখ্য, বাবর আলী পর্বতারোহীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। তিনি পর্বতারোহণ, ভ্রমণ, সাইক্লিং, কায়াকিংসহ বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ২০১৬ সালে আখাউড়া-মুজিবনগর এবং ২০১৭ সালে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া রুটে সাইকেলে ক্রস কান্ট্রি রাইড সম্পন্ন করেছেন। ২০১৭ সালে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স সফলতার সাথে শেষ করেছেন ভারতের উত্তরকাশীর স্বনামধন্য নেহরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। ভারতের বিভিন্ন রক ক্লাইম্বিং কোর্সে প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মধ্যম বুড়িশ্বর গ্রামের লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র বাবর আলী এমবিবিএস পাস করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কলেজ থেকে।
এসএস