স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে ৯ দিন ধরে খুলশীর শ্বশুরবাড়ির দুয়ারে এক শিক্ষিকা

বিয়ের আগেই ধর্ষণ, বিয়ে হয়েছিল পুলিশের জিম্মায়

স্ত্রীর অধিকার পেতে ৯ দিন ধরে শ্বশুরবাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন এক শিক্ষিকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি জানিয়েছেন তার অধিকার আদায়ে লড়াইয়ের কথা।

স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে ৯ দিন ধরে খুলশীর শ্বশুরবাড়ির দুয়ারে এক শিক্ষিকা 1

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লায়ন চক্ষু হাসপাতালের পাশে কবির মঞ্জিলে অবস্থান নেওয়া ভুক্তভোগী ইসমাত আফিয়া ইরা ইতোমধ্যে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে লাঞ্ছিতও হয়েছেন।

তবে তার শ্বশুরের দাবি, ইরা তার বাসায় নয় বরং তার শ্যালকের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

ইরার সঙ্গে অভিযুক্ত মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের বিয়ে হলেও এরপর দুবাই চলে যান তিনি। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফেরেন তিনি। তবে তিনি দুবাই হয়ে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ইসমাত আফিয়া ইরা আগে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ১৪ বছর আগে স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করে তিনি মুসলিম হন। আগে কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এসব ঝামেলায় জড়িয়ে ওই চাকরি হারানোর পর আনোয়ারার একটি কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ইরা।

সোমবার ফেসবুক লাইভ দেখার পর রাত ৮টায় ইরার সঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের। এসময় তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

চবিতে পড়ার সময় পরিচয় দু’জনের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পড়ার সময় ধনীর দুলাল মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় ইসমত আফিয়া ইরার। তখন ইরা দর্শন বিভাগের ছাত্রী। এরপর ইরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন মাহফুজুর। শুরুতে পাত্তা না দিলেও শেষ পর্যন্ত তার ফাঁদে পা দেন ইরা।

ইরাকে নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মাহফুজুর। ২০২২ সালের ৬ মে সেই পরিকল্পনা মত, ঈদের ছুটিতে ইরাকে নিয়ে বাসায় নিয়ে যান মাহফুজুর। সেদিন বাসায় কেউ না থাকায় ইরা বারবার জানতে চেয়েছিলেন, পরিবারের লোকজন কেন বাসায় নেই?

মাহফুজুর জানান, তারা হঠাৎ পরিকল্পনায় বেড়াতে গেছে, রাতের মধ্যেই ফিরবেন। কিন্তু রাত হতে থাকলেও ফিরেনি মাহফুজুরের পরিবার। সেই রাতেই ইরাকে ধর্ষণ করেন মাহফুজুর।

গর্ভবতী হয়ে পড়েন ইরা

এই ঘটনার পর দু’জনের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এর মধ্যে গর্ভবতী হয়ে পড়েন ইরা। বিষয়টি মাহফুজুরকে জানালে তিনি গর্ভপাত করাতে বলেন। ইরা তাতে রাজি না হলেও পরে নানান মানসিক চাপে তার গর্ভপাত হয়। কিন্তু তাতেও দমে যাননি ইরা। স্ত্রীর অধিকার আদায়ে শ্বশুর বাড়িতে ধর্ণা দিয়েছেন বেশ কয়েকবার, পাঠিয়েছেন লিগ্যাল নোটিশও। এসবে কাজ না হওয়ায় আত্মহত্যাও করতে যান। সে যাত্রায় তার নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার আলফালাহ গলির বাসার রুমমেটরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি সেখানে তিনদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এ ঘটনা খুলশী থানাকে জানানো হলে, তারা এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেন।

পুলিশের জিম্মায় বিয়ে

আইনি ব্যবস্থার পর নগরীর বড়পোল এলাকা থেকে মাহফুজুরকে আটক করে পুলিশ। একই সময়ে ইরাকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে মাহফুজুরের পরিবার। পরে থানার ইরাকে বিয়ে করার শর্তে মাহফুজুরকে মুক্তি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর পুলিশ ও আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। এতে ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়।

বিয়ের পরও ইরা তার বাসায় থাকতেন। ওই সময় মাহফুজুর বলতেন, কিছুদিন যেন অপেক্ষা করে। তারপর তাকে নিজ পরিবারে তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু মাহফুজুর তা না করে চলে যান দুবাই।

‘তারা মিডিয়া কিনে নিয়েছে’

শ্বশুরবাড়ির সামনে ৯ দিন ধরে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ইরা বলেন, ‘কি হবে ফোন করে? বেশ কিছুদিন ধরে অনেক মিডিয়া এখানে এসেছে, আমার বক্তব্যও নিয়েছে। কিন্তু কেউ আমার উপকারে আসেনি। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করে বলেছে, অনেকেই তো আসলো, তোমার তো কোনো গতি হলো না। তারা নাকি মিডিয়া-আইন সবই কিনে নিয়েছে। ভবিষ্যতেও এমনটাই করবেন।’

ইরা আরও বলেন, ‘আমার শ্বশুর মো. বদিউল আলম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বড় ছেলে মো. আশরাফুর রহমান (সাইদু) একজন ডাক্তার। তাদের প্রশ্রয়ে মাহফুজুর এমন কাজ করার সাহস পেয়েছে।’

ইরার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজুরের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বদিউল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ছেলে বিয়ে করেলে সেটি সে দেখবে। আমরা তার বউ ঘরে তুলবো না। এছাড়া সেই মেয়ে আমার বাসায় নয়, আমার শ্যালকের বাসার ৫-৬ দিন ধরে বসে আছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!