সোলাইমানের সেই পিস্তলের হদিস মিলেনি আড়াই বছরেও

চট্টগ্রামের পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হককে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যাপ্রচেষ্টায় ব্যবহৃত পিস্তলটির কোনো খোঁজ মেলেনি আড়াই বছরেরও বেশি সময়ে। তবে সোলায়মান গ্রেপ্তার হওয়ায় সেই পিস্তলের বিষয়টি সামনে এলে পুলিশ আশ্বাস দিচ্ছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবার সেই পিস্তল উদ্ধার করা হবে।

২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টেলিভিশন দেখছিলেন। ওই এলাকার অধিবাসী রমজান মুঠোফোনে ডাকলে এনাম তার সাথে দেখা করতে বের হন। হেঁটে হেঁটে তারা কথা বলছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর রমজান এনামকে গুলি করতে উদ্যত হন। দুজনের ধস্তাধস্তিতে গুলি বুকে লাগলেও সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে ওই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও এনামের চিকিৎসা চট্টগ্রাম করা যায়নি। রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসা শেষে দীর্ঘদিন পর তিনি সেরে ওঠেন।

ওই ঘটনায় আহত এনামের ছোট ভাই জাহেদুল হক বাদি হয়ে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় রমজান, মো. সোলাইমান, মো. তাজুল ও মো. ইসাকে আসামি করা হয়েছিল।

ঘটনার পর রমজান কুমিল্লা গিয়ে আত্মগোপন করেন। তার গুরু হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি সোলায়মান ‘সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে’ নিশ্চয়তা দিলে রমজান চট্টগ্রাম ফেরেন। চান্দগাঁও থানার খাজা রোড এলাকার একটি বাসা থেকে ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বাকলিয়া থানা পুলিশ তাকে আটক করে।

আটকের পর আদালতে রমজান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রমজান সোলায়মানের নির্দেশে এনামকে হত্যার চেষ্টা করেন। হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত পিস্তলটিও সোলায়মান সরবরাহ করেছিলেন। অর্থ-সংকটে ভোগা রমজানকে একটি ভালো চাকরি ও টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সোলায়মান। এনামকে সোলায়মান ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে গণ্য করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

এনামকে হত্যাচেষ্টার মামলা ছাড়াও সোলায়মানের বিরুদ্ধে বিচারাধীন আছে মাহবুব হত্যাকাণ্ডও। কোস্টগার্ডের হাতে সোলায়মান বন্দুকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেই দুটি মামলাও আদালতে বিচারাধীন। মাহবুব হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয় ২০১০ সালে। কারাভোগ করে জামিনে এসে সোলায়মান কোস্টগার্ডের হাতে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন ২০১২ সালে। ২০১৭ সালে এনামকে হত্যাচেষ্টার মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। আলোচিত এই সন্ত্রাসী ওই মামলায় কারাভোগ করলেও সেই অস্ত্র উদ্ধার হয়নি এখন পর্যন্ত।

সেই অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালত বন্ধ থাকায় আমরা সোলায়মানের রিমান্ড আবেদন করতে পারিনি। আদালত চালু হলেই আমরা তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। সেই অস্ত্রের সন্ধান দিতে হবে। আশা করি আমরা সেই পিস্তলের সন্ধান পাবো।’

প্রসঙ্গত, ২৪ জুলাই এনামুল হক মানিক সোলায়মানের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন বাকলিয়া থানায়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এনামকে হত্যাপ্রচেষ্টার মামলায় সোলায়মানের ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তাই সেই ১০ লাখ টাকা সোলায়মানকে পরিশোধ করতে হবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলায় পুলিশ তাকে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে।

সোলায়মান এর আগে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে নগর পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সিএমপি কমিশনারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অজান্তে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলে নেয়। এমনকি ফেসবুকে লাইভও করে। পরে এ নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘আসামিকে বগলদাবা করে মেয়র গেলেন পুলিশের অনুষ্ঠানে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনা জেনে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এর পরপরই চাঁদাবাজির মামলায় আটক হন সোলায়মান।

তবে গত আড়াই বছরে সোলায়মান এভাবে বেশ কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হয়েছে। জামিনে আবার বেরিয়েও এসেছে। কিন্তু সেই পিস্তলটির হদিস পায়নি পুলিশ। সোলায়মানের সেই অস্ত্র কেন উদ্ধার হয় না— এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিস্ময় রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!