সিটি করপোরেশনের কমিশনারদের নেতৃত্বে পাহাড় দখল হয়

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের অভিযোগ

এবারের বর্ষায় পাহাড় ধসে কোন প্রাণহানি ঘটলে সংশ্লিষ্ট পাহাড়মালিকদের (ব্যক্তি ও সংস্থা) বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৩তম সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান।

সভায় আগামী ১৫ মের মধ্যে পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য পাহাড় মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাহাড়ে ইউলিটি সংযোগ (বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি) বিচ্ছিন্ন করার জন্য সেবা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাণহানি ঘটলে পাহাড়মালিকদের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি জেলা প্রশাসকের

সভায় সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, পিডিবিসহ পাহাড়ের মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বর্ষা আসলে জেলা প্রশাসনের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় পাহাড় ধসে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায, তাহলে যারা পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ দেবে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্যোগ আইনে মামলা করবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। রেলওয়ে, সিটি করপোরেশনসহ পাহাড়ের মালিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে। পাহড়ের মালিককেই পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে হবে। জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবো।’

সভার সভাপতি মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘বর্ষায় পাহাড় ধ্স আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা প্রশাসনে চাকরি করে তাদের জন্য টেনশনের কারণ। পাহাড় ধসে যেন মানুষের মৃত্যু না হয়। আমাদের লক্ষ্য অকালমৃত্যু ঠেকানো। না ঠেকাতে পারলে জনপ্রশাসন ব্যর্থ প্রমাণিত হবে। যা সরকারের ডিসক্রেডিট।’

বিভাগীয় কমিশনার অভিযোগ করে বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি, সিটি করপোরেশনের কমিশনারদের নেতৃত্বে পাহাড় দখল হয়। তারা দেশের শত্রু। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে, হাজতে ঢোকাতে হবে। তাদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরকে মানবিক মানুষ উল্লেখ করে আবদুল মান্নান বলেন, ‘মেয়র হওয়ার আগে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, ‘‘মেয়র হলে পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের জন্য একটি ব্যবস্থা করবেন আপনি।’’ কিন্তু কোন ব্যবস্থা হলো না! চসিক দুটি ভবন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ৪০-৫০ কোটি টাকা হলেই হয়ে যায়। চসিকের প্রতি আমার আবারো অনুরোধ, তারা যেন এই কাজটি করে।’

সভায় জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের কোন সুযোগ নেই। তাদেরকে তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে হবে। সরকারে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছ প্রকল্প রয়েছে। ’

সভায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা ইশরাত রেজা মতিঝর্ণা পাহাড় রেলওয়ের নামে নেই জানালে চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসন আপাতত মতিঝর্ণা পাহাড় দেখাশোনা করবে। অবৈধ সংযোগ পাইপসহ তুলে নিয়ে আসতে হবে।

সভায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কাজ করার জন্য সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসন, থানার ওসি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়।

এই বছরও পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশংকা প্রকাশ করে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত বছর মতিঝর্ণা পাহাড়ে উচ্ছেদ করতে গেলে প্রায় শতাধিক মহিলা আমাদের উপর হামলা করে। যার পাহাড় তাকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. শহিদুল আলম, বিজিবি চট্টগ্রাম রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল মো. আরেফিন তালুকদার।

বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মকর্তা নুরুল আমিন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের শামসুল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মো. আজাদুর রহমান মল্লিক প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!