‘সানমারের কাণ্ড’ খুলশীতে পাহাড় কেটে ১২ তলা ভবন, কাঁধে উঠলো মামলা

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছ থেকে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবনটি ছয় তলার। কিন্তু সেখানে নির্মিত হচ্ছে ১২ তলা ভবন।

ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে এ ভবনটি নির্মাণ করছে স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড। সম্প্রতি এ বিষয়ে সামনারের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে স্থানীয় এক ব্যক্তি। আদালত সানমার কর্তৃপক্ষকে সমনজারি করেছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সানমার গ্রানডি নামে ওই ভবনটিতে যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট। অগ্নিকাণ্ড কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই ভবনে উদ্ধার তৎপরতা দুস্কর হয়ে পড়বে যান চলাচলের প্রশস্ত রাস্তা না থাকায়।

এদিকে পাহাড় ঘেরা উত্তর খুলশী এলাকায় ভবনের নকশার অনুমোদনের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার পর সেখানে ছয় তলার বেশি ভবন নির্মাণে অনুমোদন দেয়নি সিডিএ কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর খুলশী থানার ইম্পেরিয়াল হিলের ১০৯/সি নং প্লটের ৪ নম্বর রোডে ১২ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ করছে অভিযুক্ত স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড নামক একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান। ভবনটিতে ১১ তলার কাজ চলমান রয়েছে।

গত ৮ জুন নির্মাণাধীন ভবনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে সিডিএ আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন খুলশীর এক ব্যক্তি। ওইদিন মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের প্ল্যান অনুমোদনের ডকুমেন্টসসহ আদালতে হাজির হওয়ার সমন দিয়েছেন ওই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।

মামলায় বিবাদীরা হলেন, স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম মাসুক হক, প্রজেক্ট ম্যানেজার সেলিম বিন সালেহ, প্রজেক্ট ডিরেক্টর সফিকুর রহমান ও ম্যানেজার (এডমিন) মো. মাইনুল হক। আদালত বিবাদীদের হাজির হওয়ার সমন দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ভবনটির উত্তর পাশে তিন মিটার দুরত্ব থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি রেখেছে মাত্র দশমিক ৭৫ মিটার মাত্র। দক্ষিণ পাশে তিন মিটার রাখার পরিবর্তে রেখেছে মাত্র এক মিটার। পূর্ব দিকে দেড় মিটার রাখার পরিবর্তে রেখেছে এক মিটার এবং পশ্চিম পাশেও তিন মিটার দূরত্ব রাখার পরিবর্তে রেখেছে মাত্র দেড় মিটার। বর্তমানে ভবনটির ১০ তলার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নগরের উত্তর খুলশীর স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দীন আলম, মোহাম্মদ জাকারিয়া, মো. গোলাম মোস্তফা, প্রফেসর আব্দুল ওয়াহেদ, ডা. এ কে এম সাদিক হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, মো. মঈনউদ্দীন, সৈয়দ রহমত এলাহীসহ মোট ১১জন একটি অভিযোগ দেন চউকে। অভিযোগ দায়ের করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চউক। গত ২৯ এপ্রিল পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সিএমপি খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সৈয়দ রাফিদুল আলম নামে একটি ব্যক্তি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইয়াসিন আরফাত সাজ্জাদ। মামলার বরাত দিয়ে তিনি জানান, ৬ তলা প্ল্যান নিয়ে সামনের দিকে ৬ তলা করলেও পেছনের দিকে ১২ তলা নির্মাণ করছে তারা। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার অনুযায়ী চারপাশে ১০ ফুট না ছেড়ে, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ফুট পাহাড় কেটে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর খুলশীতে ভবন করছে স্যানমার। এতে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ১২ ধারা এবং সিডিএ আইন ২০১৮ সালের ৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেডের হেড অব অপারেশন এহেসানুল বারীকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করার পরও সাড়া মেলেনি।

মুআ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!