চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরতী গ্রামে এক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে আবু শামা (৪৮) নামে এক দোকানদারের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ঘটনার পর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ১২ বছরের শিশুটি। জাতীয় হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করার পর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলেও তিন দিন ধরে মামলা নেয়নি। উল্টো স্থানীয়ভাবেই মীমাংসা করার জন্য চাপ দেয় থানার পুলিশ। এদিকে এ নিয়ে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে সর্বশেষ বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাতে মামলা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
নির্যাতিত শিশুর মায়ের অভিযোগ, গত দুইদিন ধরে বাচ্চাটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর রক্তক্ষরণ কিছুটা বন্ধ হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভয় ও আতঙ্কে বারবার কেঁদে কেঁদে উঠছে ছেলেটি। আমরা ঘটনার বিচার চাই।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই শিশুটির মা বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। এরপর ঘরে পুলিশ এসে সব খবর নেয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন মামলা নেয়নি। স্থানীয় মেম্বারকে ঘটনাটি মিটমাট করতে বলে পুলিশ চলে গেছে। শুনেছি বড় অংকের টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় মেম্বার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির পাশের দোকানে কলা কিনতে যায় ১২ বছরের এই শিশুটি। ওই সময় দোকানদার আবু শামা শিশুটিকে ফুঁসলিয়ে দোকানের পেছনে চরে নিয়ে যায়। এরপর হাত ও মুখ চেপে ধরে শিশুটিকে নির্যাতন করে। শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় এই পাষন্ড।
পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। অভিযুক্ত আবু শামা দক্ষিণ চরতী গ্রামের মৃত আবু ইউসুফের ছেলে।
কান্না করতে করতে শিশুটির দাদী বলেন, আমার নাতির সর্বনাশ করেছে ওই পাষন্ড আবু শামা। কোন উপায় না দেখে আমরা পুলিশকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু পুুলিশ মামলা না নিয়ে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে শেষ করতে মেম্বারকে বলে গেছে। আমার নাতির অবস্থা খুবই খারাপ। ও বারবার ভয় পেয়ে কেঁদে উঠছে। শিশুটি দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র বলে জানিয়েছেন তার দাদি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল চৌধুরী বলেন, ঘটনা শুনে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নির্যাতিত শিশুটির জবানবন্দি নিয়েছে। অভিযুক্তের বাড়িও গিয়েছে। অভিযুক্তকে খুঁজে পায়নি। পুলিশ আমাকে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছে। কিন্তু অভিযুক্তকে খুঁজে না পাওয়ায় কোনো সমাধান করতে পারছি না।
জানা গেছে, অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সকালে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ। তিনদিন মেডিক্যালে ভর্তি রেখে অবজারভেশন দরকার ছিল। কিন্তু করোনা ঝুঁকির কারণে ক্ষতস্থান ওয়াশ করে শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সিপি