সাগরে জলদস্যু আতঙ্কে জেলেরা

সাগরে জলদস্যু আতঙ্কে জেলেরা 1কুতুবদিয়া প্রতিনিধি: জলদস্যুরা দলবদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে ফিশিং ট্রলার ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় শত শত ফিশিং ট্রলার গত দুই সপ্তাহ পূর্বে সাগরে মাছ ধরার উদ্যেশ্যে যায়। সাগরের বিভিন্ন এলাকায় জলদস্যুদল কয়েকটি ট্রলার নিয়ে নির্বিচারে ডাকাতি কার্যক্রম চালানোর সময় কুতুবদিয়ার উপকূলের ছোট-বড় অর্ধশত ফিশিং ট্রলার ডাকাতের কবলে পড়েছে বলে জেলেরা উপকূলে ফিরে এসে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন। বর্তমানে জেলেরা জলদস্যুদের মারধর ও অপহরণের ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না। গত দুই দিনে কুতুবদিয়া উপকূলের অমজাখালী গ্রামের ছালে আহমদের মালিকানাধীন এফ.বি মায়ের দোয়া, আমান উল্লাাহর মালিকানাধীন এফ.বি সাগর, নুরুল আবছারের মালিকানাধীন আল্লাহর দান, নুরুল বশরের মালিকানাধীন এফ,বি জাহান ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মলমচর এলাকার চার ফিশিং ট্রলারের জেলে নাছির মাঝি, গফুর মাঝি, শাহাব উদ্দিন মাঝি, বাবুল মাঝিসহ ২০ জেলেকে অপহরণ করে জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য মহেশখালী দ্বীপের হাসেরচরের গহীন প্যারাবনে আটকে রেখেছে। বর্তমানে ট্রলারের মালিক ও জেলে পরিবার মুক্তিপণের টাকা বিকাশ নাম্বারে পাঠানোর জন্য জলদস্যুরা বারংবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। জেলে অপহরণ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্র“য়ারী) অমজাখালী গ্রামের নুরুল বশর, ছালে আহমদ, আমান উল্লাহ কুতুবদিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপহৃত জেলেদের মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে উপকূলে ফিরে আসা জেলে বাবুল মাঝি জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাগর থেকে মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে কুতুবদিয়া চ্যানেলের মুখে পৌছলে অস্ত্রধারী জলদস্যুরা ট্রলার নিয়ে তাদের ট্রলারে হামলা চালায়। মালামাল লুট করে তাকে (বাবুল মাঝি) জলদস্যুদের ট্রলারে তুলে নিয়ে মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে হাসেরচর নামক স্থানে ঝাউবাগানে আটকে রাখে। জলদস্যুদের বিকাশ নাম্বারে ট্রলারের মালিক আব্বাস কোম্পানী জলদস্যুদের টার্গেট মোতাবেক টাকা দিয়ে তাকে (বাবুল মাঝি) ছাড়িয়ে আনেন। বর্তমানে জেলে অপহরণ আতঙ্কে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় উপকূলের হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে।

উপকূলের ফিশিং ট্রলারের মাঝি নুরুল হক জানান, গত এক মাস ধরে জলদস্যুরা সাগরে নির্বিচারে ডাকাতি শুরু করেছে। গত বছর কুতুবদিয়ার জলদস্যু সর্দ্দার দিদার পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ওই জলদস্যু বাহিনী ইসহাক মেম্বার ও জলদস্যু মুকুল নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে সাগরে লেমশীখালী ও উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের গুরা কালু, ছালে আহমদ, পিতলা বাদশা, খলিল উল্লাহ, আবুইয়া, সাহেদ, বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের আলমগীর, জাকের হোসেন, গন্ডামারার খালেক, সবুর ও মহেশখালী উপজেলার আনজু প্রকাশ সিকদারসহ থানার তালিকাভূক্ত জলদস্যুরা দলবদ্ধ হয়ে সাগরে কয়েকটি ট্রলার নিয়ে নির্বিচারে ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে। এসব জলদস্যুদের নাম থানার তালিকাভূক্ত থাকলেও সু-কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সাগরে জলদস্যুরা ডাকাতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপহৃত জেলেদের মুক্তিপন নিয়ে টোকেন দিচ্ছে ।

এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্্রাপ্ত ওসি) উপ-পরিদর্শক বদিউল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুতুবদিয়া উপকূলের কয়েকটি ফিশিং ট্রলার বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি হওয়ার কথা শুনেছেন। থানায় নৌযান না থাকায় সাগরে টহল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য সাগরে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর টহল জোরদার করলে জলদস্যুতা হ্রাস পেত। কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়ার কন্টিজেন্ট কমান্ডার ফরিদ আহম্মদ জানান, সাগরে তাদের টহলটিম জোরদার রয়েছে। জলদস্যুতার ব্যাপারে গভীর সাগরে নৌবাহিনীর জাহাজ টহল জোরদার করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন এ প্রতিনিধিকে।

কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির উত্তর জোনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারী হতে ১৬ ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত কুতুবদিয়ার উপকূলের উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, লেমশীখালী ইউনিয়নের প্রায় তিন’শ ফিশিং ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জন্য যায়। মাছ ধরা অবস্থায় জলদস্যুরা দল বেঁেধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কয়েকটি ট্রলার যোগে সাগরে নির্বিচারে ডাকাতি করে গেলেও কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর নজরে পড়ছে না। জেলেরা সাগর থেকে মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌছলে জলদস্যুরা ৬টি ট্রলার ও ১০ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত অপহৃত ১০ জেলেকে জলদস্যুরা মুক্তি দেয়নি।      
 
কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া কুতুবদিয়ার বেশ কয়েকটি ফিশিং ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। এসময় জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হয়েছে দুই ডজন জেলে এবং জলদস্যুদের মারধরে আহত হয়েছে শতাধিক জেলে। কুতুবদিয়া দ্বীপের সাধারণ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। জলদস্যুদের তান্ডবে জেলেরা নিরাপদে সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছে না। জেলেদের নিরাপত্তার নিমিত্তে সাগরে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীর টহল ও উপকুলে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!