সাইকেলের লোভ দেখিয়ে গার্মেন্টস কর্মীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেপ্তার ১

চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অবশেষে অপহরণের শিকার হলেন গার্মেন্টস কর্মী কৃষ্ণ। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাইসাইকেলের লোভ দেখিয়ে চট্টগ্রামের বাকলিয়ার এক্সেস রোডের মুখ থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে তারা কৃষ্ণকে আটকে রেখে তার বড় বোনকে ফোন করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

কৃষ্ণের বড় বোন বিষয়টি বাকলিয়া থানাকে জানালে পুলিশ কৌশলে চকবাজার বগারবিল এলাকা থেকে মো. লিটন (২৬) নামের এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে এবং কৃষ্ণকে উদ্ধার করে। এ সময় আরও দুই অপহরণকারী পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার লিটন কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট থানার রশিদ চেয়ারম্যান বাড়ির আব্দুল জলিলের ছেলে। এছাড়া পলাতক আসামিরা হলেন বগারবিল এলাকার মো. করিম মিয়ার ছেলে মো. আবুল খায়ের বুইশ্যা (২৫) ও দেওয়ানবাজার এলাকার জনি (৩০)।

জানা গেছে, অপহরণের শিকার কৃষ্ণ এ্যাপল গার্মেন্টসে মার্কার সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বড় বোনের সঙ্গে নগরীর রাহাত্তারপুলের মাজার গেইট এলাকায় থাকতেন। গত অক্টোবর মাসে তার বড় বোন বাসা ছেড়ে দিলে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় বন্ধুর বাসায় উঠেন কৃষ্ণ। সে সুবাদে চাকরিতে আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহার করতেন বাইসাইকেল। একদিন হঠাৎকরে তার সাইকেলটি হারিয়ে যায়। সাইকেলটি হারিয়ে যাওয়ার কারণে তার চাকরি যেতে দুইদিন দেরি হয়ে যায়। এ জন্য চাকরিটাও হারাতে হয় কৃষ্ণকে।

আরও জানা যায়, একদিন তার হারানো বাইসাইকেলটি বহদ্দারহাট এলাকায় একটি ছেলে চালাতে দেখে সাইকেলটি শনাক্ত করে নিয়ে নেন কৃষ্ণ। পরে কৃষ্ণ সাইকেলটি তার পূর্বের পরিচিতি সহকর্মী লিটনকে একদিনের জন্য দিয়ে দেন। এর একদিন পর (১ ডিসেম্বর) সাইকেলের জন্য ফোন করলে অভিযুক্ত লিটন সোমবার (৭ ডিসেম্বর) তাকে গাড়ি নিতে আসতে বলেন। তার কথামতো কৃষ্ণ সাইকেলের জন্য চকবাজারের বগারবিল এলাকার বদি আলমের খামার বিলে আসলে তার সহকর্মী লিটনসহ আরও দুইজন মিলে তাকে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে তারা কৃষ্ণের বড়বোনকে ফোন করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কৃষ্ণের বড়বোন তাদের বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা দিলে অপহরণকারীকে বাকি ১৮ হাজার টাকা না দিলে কৃষ্ণকে মেরে ফেলা হবে বলে তার বোনকে হুমকি দেয়। বিষয়টি কৃষ্ণের বড়বোন বাকলিয়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ সাইকেলসহ কৃষ্ণকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে অপহরণকারী লিটনকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে কৃষ্ণের বড় বোন মনি সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমার ভাইকে অপহরণ করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। আমি ভাইয়ের কথা চিন্তা করে বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম। এগুলো দেওয়ার পর বাকি ১৮ হাজার টাকার জন্য তারা বার বার আমাকে ফোন করতে থাকে। টাকা না দিলে আমার ভাইকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন আমি বিষয়টি বাকলিয়া থানাকে জানালে পুলিশ গিয়ে আমার ভাইকে উদ্ধার করে এবং লিটনকে আটক করে। আমি তিন অপহরণকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, অপহরণের শিকার কৃষ্ণের বড় বোন তার ভাইকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি আমাদের জানান। তখন আমরা কৌশলে অপহরণের স্থান শনাক্ত করে চকবাজারের বগার বিল এলাকার বদি আলমের খামার বাড়ি থেকে বাইকসহ কৃষ্ণকে উদ্ধার করি। এ সময় লিটন (২৬) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। বাকি দুই সহযোগী পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার লিটনের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করে তাকে আদালতে হয়েছে।

এএন/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!