সাংবাদিক ইমরান হত্যার ‘রহস্য’ উদঘাটন করার দাবি উঠল রাঙ্গুনিয়ার রাজপথে

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বেপরোয়া চাঁদের গাড়ির চাপায় সংবাদকর্মী ইমরান হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছে রাঙ্গুনিয়ার সাংবাদিক, নিহতের বন্ধু-স্বজন ও এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গোডাউন চত্বরে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবৈধ, ফিটনেসবিহীন চাঁদের গাড়ির দৌরাত্ম্য বন্ধ ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আহবানও জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে মরিয়মনগর থেকে মোটরসাইকেলে করে সরফভাটায় তার নিজ বাড়িতে ফেরার সময় রহস্যজনক এক ‘সড়ক দুর্ঘটনা’য় সাংবাদিক ইমরান হোসেন (৩০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি দৈনিক আমাদের সময়ের রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ইমরান হোসেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার রুস্তম আলীর ছেলে। তিনি পিতামাতার একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন। পরিবারে তার দুই বোন রয়েছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মীরা দাবি করে আসছেন, সাংবাদিক ইমরানকে পরিকল্পিতভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে নদী খননে বসুন্ধরা গ্রুপ, ইটভাটা, বনবিভাগ,পল্লী বিদ্যুৎ ও খাসজমি দখলের বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার সাংবাদিক মুবিন বিন সোলাইমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে পাক্ষিক রূপালী রাঙ্গুনিয়ার সম্পাদক এনায়েতুর রহিম বলেন, ‘গত এক বছরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রতিশ্রুতিশীল ১২ জন তরুণ এসব বেপরোয়া-ফিটনেসবিহীন চাঁদের গাড়ির চাপায় মারা গেলেও কোনো চালক বা গাড়ির মালিককে কখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়কে অর্ধশতাধিক নিহত ও শতাধিক পঙ্গু হয়েছে। এসব গাড়ির মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। অবিলম্বে ইমরানের মৃত্যুর পেছনে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বাদশা বলেন, ‘এসব চাঁদের গাড়ির কারণে সড়কে যাতায়াত অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, ‘অবৈধ চাঁদের গাড়িচলাচল নিষিদ্ধ করে রাঙ্গুনিয়ার সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে। ইমরান হত্যায় দোষী চালকের শাস্তি নিশ্চিতের আহবান জানান।’

সরফভাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ জমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের জীবন জিম্মি হয়ে পড়েছে অবৈধ চাঁদের গাড়ির কাছে। প্রতিনিয়ত এসব গাড়ি সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ পিষে মারছে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

সংবাদকর্মী মোস্তফা ইউসুফ বলেন, ‘সাংবাদিক ইমরান তার লেখনীর কারণে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। হুমকিও পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রহস্যময় সড়ক দুর্ঘটনায় ইমরানের মৃত্যু হয়েছে। চাঁদের গাড়ি একদিকে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়-বন শেষ করছে, অন্যদিকে সড়কে পিষে মারছে মানুষদের।’

অবিলম্বে সাংবাদিক ইমরানের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা ও ঘটনার পেছনের কুশীলবদের উন্মোচন করার আহবান জানান তিনি।

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মতিউর রহমান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ, আবু তালেব সানি, নিহত ইমরানের বন্ধু প্রকৌশলী আজাদুর রহমান, প্রবাসী কাজী আরিফ, সাংবাদিক মামুন জোয়ারদার, সাংবাদিক সানি বড়ুয়া, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী শাহ, ক্ষেত্রবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান, নিহত ইমরানের বাবা রুস্তম আলী, যুবলীগ নেতা শাহ আলম, ইউপি সদস্য দিদার আলম খোকন ও ক্ষেত্রবাজার ব্যবসায়ী নেতা জাহাঙ্গীর আলম।

এর আগে জানা গিয়েছিল, শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দিনগত রাত একটার দিকে সাংবাদিক ইমরান তার মোটরসাইকেলটি পার্ক করে রোয়াজারহাট জামে মসজিদে ঢোকেন। রাত দেড়টার দিকে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে রোয়াজারহাট মধুবনের সামনে মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় তিনি দাঁড়াতেই সামনের দিক থেকে দ্রুতগামী একটি চাঁদের গাড়ি তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, দক্ষিণ রাজানগরের সোনারগাঁও এলাকার মো. শহীদ নামে এক ড্রাইভার চাঁদের গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। ইসলামপুরের বটতল এলাকার মফিজ সওদাগরের মালিকানাধীন গাড়িটির নম্বর ৯২৯৫।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার জানিয়েছিলেন, ইমরানের ঘাড় ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক আছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!