চট্টগ্রাম কারাগার মুরগি-মাছ কিনছে বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে, ক্রয় পরিকল্পনায় আকাশ-পাতাল ফারাক

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে পণ্য ক্রয়ের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এতে মুরগি ও মাছ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘পুকুর চুরি’র প্রমাণ মিলেছে। আর এই ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি করেছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। এটি ঢাকা থেকে অনুমোদনও করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৭ আগস্ট কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে সহকারী কারা পরিদর্শক (অর্থ) আব্দুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত কর্তৃক এক চিঠিতে ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, এ বিষয়ে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে কারা কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।

ক্রয় পরিকল্পনার ২০২৩-২৪ সালের নথিতে দেখা গেছে, ছয় মাসের ক্রয় পরিকল্পনায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কেজি। আর দাম ধরা হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা দাম ধরা হয়েছে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে চলতি মাস পর্যন্ত মুরগির কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্য রয়েছে।

এদিকে বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে ৬ হাজার ২০০ কেজি মুরগির দাম দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। কিন্তু কারাগারের ক্রয় পরিকল্পনার অনুযায়ী ৪৫০ টাকা হিসেবে দাম দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ক্রয় পরিকল্পনা থেকে বাস্তব দামের ফারাক দাড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

ক্রয় পরিকল্পনায় সোনালী মুরগি ১২০০ কেজির দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। সেই হিসেবে সোনালী মুরগীর দাম পড়ছে কেজিতে ৪৫০ টাকা। কিন্তু বাস্তব বাজার দরে হিসেবে যেটি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩২০ টাকা কেজি হিসেবে ১২০০ কেজি সোনালী মুরগির দাম হওয়ার কথা ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সেই হেসেবে দামের ফারাক দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

এছাড়া ক্রয় পরিকল্পনায় কক মুরগির চাহিদা দেখানো হয়েছে ১২০০ কেজি। ৫৫০ টাকা প্রতিকেজি হিসেবে মোট দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে এটি দাম ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। ৩৪০ টাকা হিসেবে ১২০০ কেজি কক মুরগির দাম ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বাজার দরের চেয়ে ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা বেশি দাম ধরেছে কারাগার কর্তৃপক্ষ।

মাছের ক্রয় পরিকল্পনায় দেখা গেছে, পাঙ্গাস ৩ হাজার ২০০ কেজি মাছের দাম ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এতে প্রতিকেজির দাম পড়েছে ২৩৫ টাকা। কিন্তু বাজারে পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকায়। সেই হিসেবে ৩ হাজার ২০০ কেজি মাছের দাম পড়ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর কারাগারের চাহিদার সঙ্গে দামের ফারাক ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

মৃগেল মাছ ৩ হাজার ২০০ কেজির দাম দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। যা কেজি পড়েছে ২৮২ টাকা। কিন্তু গত জুলাই-আগস্ট মাসে মৃগেল মাছ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। সেই হিসেবে দুটোর মধ্যে দামের ব্যবধান ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

সুরমা মাছ ১৬০০ কেজির দাম ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। প্রতিকেজি সুরমা মাছের দাম পড়েছে ৪৭০ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে হিসেব করলে ১৬০০ কেজির মোট দাম দাঁড়ায় ৩ রাখ ২০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে কারাগার ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা বাড়তি দাম ধরেছে।

এ বিষয়ে জানতে সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!