সমাধান হচ্ছে না রোহিঙ্গা সমস্যা : আগামী মাসে প্রকাশ হচ্ছে শুমারীর ফলাফল

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার ॥

প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা ও অনুপ্রবেশ করেই চলেছে মায়ানমারের রোহিঙ্গারা। আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের প্রতিহত করেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

সমাধান হচ্ছে না রোহিঙ্গা সমস্যা : আগামী মাসে প্রকাশ হচ্ছে শুমারীর ফলাফল 1
অন্যদিকে সীমান্ত পার্শ্ববর্তী টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন নতুন রোহিঙ্গা দল তৈরী হচ্ছে টেকনাফে। আর তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। এতে করে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্ষেত্র হচ্ছে ক্ষতির সম্মুখিন। এই রোহিঙ্গারাই জেলার বনভূমির বিশাল একটি অংশ দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূল কর্মকান্ড। ইয়াবা ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ এমনকি টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় গিয়ে তারা যে কোন ধরণের অপকর্ম করেই চলেছে।
তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে সীমান্তে বিজিবি কড়া নজরদারী রাখলেও প্রতিদিনই কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে তারা প্রবেশ করার চেষ্ট করছে। গত সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৮৬ জন মিয়ানমারের নাগরিককে প্রতিহত করেছে বিজিবি।

 

টেকনাফের খারাংখালী, জমিংখালী, উংচিপ্রাং ও হ্নীলা পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করেন। এসময় চেকপোষ্টে নিয়োজিত বিজিবির সদস্যরা একদিনেই ৮৬ জন রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করে। এর মধ্যে ২১ জন পুরুষ, ৮০ জন নারী ও ২৫ জন শিশু রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফস্থ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ।

 

এদিকে এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় কক্সবাজারে মাঠ পর্যায়ের রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ করে সরকার।
পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করার জন্যই শুমারী করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বসবাস রয়েছে কক্সবাজারসহ এমন ৬টি জেলায় একযোগে এ এবছর ফেব্রুয়ারীতে শুরু হয়ে শুমারীর কাজ চলে মে মাস পর্যন্ত।

 

রোহিঙ্গাদের সাথে পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ মতবিনিময় করে মোবাইল ট্যাবের মাধ্যমে অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের ছবি তুলে, তাদের কাছে থাকা দলিলপত্র বা মিয়ানমারের কাগজ থাকলে তার স্কেন কপি নিয়ে তাদের তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।

 

মুলত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কত সংখ্যক অনিবন্ধীত রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানতেই সরকারের এই উদ্যোগ হলেও এখনও পর্যন্ত তাদের তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পাঁচ মাস আগে শেষ হওয়া এই গণনার ফলাফল এখনো প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

 

বাংলাদেশে অবস্থনরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি প্রকল্প পরিচালক, মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, সংগৃহিত তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে শুধু রোহিঙ্গাদের আলাদা তালিকা তৈরি করাটা একটু সময় সাপেক্ষের ব্যপার। যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে যে বাংলাদেশে কি পরিমান রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। আগে এদের সংখ্যা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি এবছর ডিসেম্বর মাসেই আমরা বাংলাদেশে বা কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রকাশ করবো। তখন তাদের সঠিক সংখ্যাও জানা যাবে।

 

জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদার দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। এ ছাড়া কুতুপালং, লেদা ও শামলাপুরে রয়েছে আরো ৩টি অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্প। এ তিনটি অনিবন্ধিত ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অন্তত আরো ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। যাদের কোন সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!