সভাপতি সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

একদিন বাদেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে সভাপতি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন জেলা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আশির্বাদ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। তবে তাঁকে ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বিরোধীরা।

দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদের পরিবর্তন আসবে এই সম্মেলনে। তারুণ্য নির্ভর একটা কমিটিই হবে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটে।

বর্তমানে এই ইউনিটে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাউজান আসন থেকে টানা ৪ বারের নির্বাচিত সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম। এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে ঘুরে ফিরেই আলোচনায় আসছে এই দু’জনের নাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নেতাকর্মীদের চায়ের আড্ডা সবখানেই সভাপতি পদে বর্তমান শীর্ষ দুই নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।

দু’জনের পক্ষেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের কর্মী সমর্থকরা। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গত সম্মেলনেও সভাপতি প্রার্থী পদে বেশ আলোচনায় ছিলেন। শেষে সমঝোতার ভিত্তিতে সভাপতির দায়িত্ব পান নুরুল আলম চৌধুরী। পরে নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন ফজলে করিম। এর পর থেকেই পরবর্তী সভাপতি হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
নেতৃত্বের এই প্রতিযোগিতায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সমর্থন পাচ্ছেন এমএ সালাম। আলোচনার শুরু থেকেই এমন খবরে নেতা কর্মীদের আড্ডায় এগিয়ে আছেন সালাম। তবে শেষ দিকে এসে সালামের শুভাকাঙ্খী শিবিরে চিন্তার ভাঁজ ফেলছেন বিভিন্ন উপজেলা নেতাদের নিয়ে গড়ে উঠা একটি গ্রুপ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক হচ্ছেন। যাদের অবস্থান থাকবে মোশাররফ বিরোধী শিবিরে- এমন আলাপও উঠে এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উত্তর জেলার অভিভাবক। তৃণমূল ও কেন্দ্রে তাঁর শক্ত অবস্থান রয়েছে। সভাপতি পদে পরিচ্ছন্ন ইমেজের এমএ সালামই তাঁর সমর্থন পাচ্ছেন। যে প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন হোক না কেন সালাম ভাই সভাপতি হচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে বিভিন্ন উপজেলার নেতাদের নিয়ে জেলার বেশ কয়েকজন নেতা আলাদা একটি বলয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় আছেন। এই বলয়ে কয়েকটি ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আছেন বলে শুনেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলী জবাব দেন এমএ সালাম। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, আমি চার মেয়াদে ২৭ বছর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। কখনও প্রার্থী ছিলাম না। এখনও প্রার্থী নই। কাউন্সিলররা আছেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আছেন। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই হবে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, ফটিকছড়ির এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গণী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, মিরসরাই আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমান আতা।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গিয়াস উদ্দীন বলেন, সম্মেলনে দুই প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন হতে পারে। হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিবেন, সেটা নাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। রাজপথে ছিলাম, অসংখ্যবার জেল জুলুমের শিকার হয়েছি, অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় গ্রেফতার হয়েছি। আশা করছি কাউন্সিলররা এর মূল্যায়ন করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত বলেন, নেত্রী বলেছেন যেন আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে আসা নেতাদের নেতৃত্বে আনা হয়। আমার ব্যাপারে নেত্রী সবকিছু জানেন। তিনি যদি মনে করেন দলের নেতৃত্বে আমাকে দরকার আছে তাহলে আমাকে দায়িত্ব দিবেন। তবে এখনো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

সম্মেলনের বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা আবু তৈয়ব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সবসময় উৎসবমুখর হয়। এবারও তেমন হবে। আর নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কারণ নেত্রী জানেন তৃণমূল কি চায়। আর তৃণমূলও নেত্রীর ভাষা বুঝে।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন।এদিন সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।

এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এমপিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে কাজির দেউরির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। মূলত সেখানেই নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এবারের সম্মেলনে জেলার ৭টি উপজেলা ইউনিট থেকে ৩৬৬ জন কাউন্সিলর অংশ নিবেন।

সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়ে এমএ সালাম বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। সব কিছুই সুষ্ঠুভাবে উৎসবমুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হবে। কাউন্সিলররা যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!