শোকে মা-বাবা কবরে, ৫ বছরে তবু এগোয়নি আদিল হত্যার বিচার

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সদস্য আদিল মাহমুদ চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর)। ২০১৪ সালের এইদিনে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের পরদিন তার বাবা আবু তাহের চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে হত্যামামলার আসামিরা সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে জামিনে রয়েছে। এদিকে খুনের ঘটনার ৫ মাসের ব্যবধানে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পুত্র শোকে মারা যান আদিল হত্যা মামলার বাদী ও তার পিতা আবু তাহের চৌধুরী। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি মারা যান আদিলের মা জিন্নাতুন নাহার বেগম।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর আদিলের বাবা আবু তাহের চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নম্বর ২)।

মামলার আসামিরা ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জামিন নেন। ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মিরসরাইয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালতের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট শর্মিলা রায় লাভলী তাদের জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর কিছুদিন পর আসমিরা জামিনে বেরিয়ে আসে।

আদিলের ছোট ভাই আদনান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শফিউল আলম প্রকাশ কানা শফির নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমার বড় ভাইকে নৃশংসভাবে খুন করে। শফিদের সঙ্গে ২০০৪ সাল থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল আমাদের। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু শফির ভাই শাহ আলম ও তার ভাতিজারা ২০১৩ সালে শবে কদরের রাতে সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের বাড়ি প্রাঙ্গণে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত, সন্ত্রাসীরা এলাকার চিহ্নিত। বিভিন্ন সময় তারা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমাদের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমার নিরপরাধ ভাইকে তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ভাইয়ার শোকে আমার বাবা ও মাকে হারিয়েছি। হত্যার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি। কখন মামলার রায় হবে বুঝতেছি না। আমি দ্রুত বিচার কাজ শেষ করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আদিল মিরসরাই উপজেলা ছাত্র রাজনীতির মেধাবী ছাত্রনেতা ছিল। তাকে হারানোর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আমি আদিলের খুনীদের যথোপযুক্ত বিচারের দাবী জানাচ্ছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) তার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া তার আত্মার মাগফেরাতের জন্য কোরআর খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত ৮টায় মিরসরাই উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজারে ফারুকের চায়ের দোকানে আদিল মাহমুদসহ আরো কয়েকজন বসে স্থানীয় একটি দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলো। একপর্যায়ে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা যোগে মুখোশ পরিহিত প্রায় ২৫ জন শসস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে প্রথমে এলোপাথাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। প্রাণে রক্ষার জন্য আদিল ভোরের বাজারের দক্ষিণ পূর্ব পার্শ্বের আকাশ মিয়ার বাড়িতে দৌড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে, চাইনিজ কুড়াল, রামদা ও চুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। পাশাপাশি তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাত ও পায়ের রগও কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা।

পরে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা সদরের মাতৃকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলাটির শুনানি চলছে। সাক্ষী গ্রহণের পর বিচারকাজ শুরু হবে। আশা করছি ঘটনায় জড়িত আসামিরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!