শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূূলক করায় ক্ষুদ্ধ হেফাজত

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূূলক করায় ক্ষুদ্ধ হেফাজত 1আজিজুল ইসলাম, হাটহাজারী : দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূূলক করায় ক্ষুদ্ধ হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও তুলেছে তারা। সরকার সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আসতে পারে নানা কর্মসূচি।
মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায়, চলতি বছর বর্ষবরণের আয়োজনে এ শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণার পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ও ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা মঙ্গল শোভাযাত্রার সমালোচনা করে বক্তব্য রাখার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে (৮ এপ্রিল) শনিবার সন্ধ্যায় এ প্রসঙ্গে সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি প্রদান করে সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বর্ষবরণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রার নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্ষবরণের নামে মূলতঃ মুসলমনাদের ঈমান-আক্বীদা বিরোধী ভিনদেশী হিন্দুত্ববাদি সাংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। মুসলমানদের বিশ্বাস মতে ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। সুতরাং মুসলমানদের জন্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
তিনি আরো বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভা যাত্রার নামে যে র‌্যালি বের করা হয়, এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? ইসলামের বিশ্বাস মতে কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক হেফাজতের এক শীর্ষ নেতা এ প্রতিবদেককে জানান, বিবৃতিতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্ষবরণের উৎসবের নামে নারী-পুরুষ পরস্পরের মুখে উল্কি আঁকা, জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেয়া, এগুলোর সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষ এসব পালন করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্যে এসব পালনের কোনই সুযোগ নেই।
তিনি আরো জানান, পান্তা-ইলিশের নামে যে সংস্কৃতির চর্চা এখন চলে থাকে, তাও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কোন অংশ নয়, বরং এটা গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কোটি কোটি মানুষের দারিদ্রতার সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় সংস্কৃতি ও আনন্দ হতে হবে, যেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামাজিক রীতি ও নীতি-আদর্শকে ফুটিয়ে তোলে এবং যে আনন্দে প্রায় সকলেই শরীক হতে পারে। হেফাজত নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রেখে বলেন, বাঘ-ভাল্লুক ও সাপ-বিচ্চুর মঙ্গল শোভাযাত্রা কার প্রতিনিধিত্ব করছে এবং পান্তা-ইলিশে দেশের কত ভাগ মানুষ শরীক হওয়ার সক্ষমতা রাখে?
এদিকে হেফাজত শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশে ঈমান-আক্বীদা বিরোধী শিরকী এসব প্রথা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও তুলেছে তারা। যদি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আসতে পারে বিবৃতিসহ নানা কর্মসূচি আসতে বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব স্কুল ও কলেজে আড়ম্বরপূর্ণভাবে বর্ষবরণ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৬ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, এ বছর পহেলা বৈশাখে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা বর্ষবরণ করার। তাছাড়া ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করায় বিষয়টি গুরুত্বসহ উদযাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!