লাভের টাকা মেরে মোটাতাজা কর্ণফুলী গ্যাসের শীর্ষ কর্তারা, বছরে আত্মসাৎ তিন কোটি

অভিযানে গিয়ে সত্যতা পেল দুদক

চট্টগ্রামভিত্তিক কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বার্ষিক আয়ের মুনাফা থেকে ২০ ভাগ টাকা আত্মসাৎ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা। বছরের পর বছর ধরে এই হরিলুট চলে আসলেও এবারই প্রথম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে সেটি ধরা পড়লো।

দুদকের অভিযানে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক জন্মবার্ষিকীতেই ১৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে কোনো ভাউচার ছাড়াই।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি টাকা, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের ষোলশহর কেজিডিসিএল কার্যালয়ে এক অভিযান পরিচালনা করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। কেজিডিসিএলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহাব্যবস্থাপক মোজাহার আলীর দফতরে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিক তদন্তে ১০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, প্রতি বছর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) থেকে আয়ের নিট মুনাফার শতকরা ৮০ ভাগ টাকা পান সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাকি ১০ ভাগ টাকা চলে যায় কল্যাণ তহবিলের নাম দিয়ে। এছাড়া আরও ১০ ভাগ টাকা চলে যায় ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের পকেটে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮০ ভাগ অর্থ সমান হারে বন্টন করা হলেও বাকি ২০ ভাগ টাকাই বিভিন্ন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

দুদকের অভিযানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ওয়ার্কার পার্টিসিপেশন প্রফিট ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ (এফডিআর) এবং সুদের অন্তত ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, কোম্পানির নিট মুনাফার শতকরা ২০ ভাগ অর্থ থেকে প্রতিবছর কোম্পানির অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রোগ্রামে ব্যয় করা হয়েছে দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এসব ব্যয়ের বিল-ভাউচার পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ভুয়া বিলের কপি তৈরি করার সত্যতা পাওয়া গেছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘আমরা মাত্র একটি অর্থবছরের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। অল্প সময়ের এই অভিযানে গিয়ে সব কিছু যাচাইবাছাই করা সম্ভব হয় না। খোঁজ করলে আরও কত বছর ধরে এসব অনিয়ম করে আসছে তা বের হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

এই বিষয়ে বিস্তারিত রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে শীঘ্রই কমিশন বরাবর প্রতিবদেন দাখিল করা হবে বলে জানান এই দুদক কর্মকর্তা।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!