রেলের টাকা মেরে বরখাস্ত স্টেশন মাস্টারকে বদলির ‘পুরস্কার’

চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়েছেন কোটি টাকা, মামলার আসামিও

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশনে টিকিট বিক্রির টাকা আত্মসাৎ ও চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন স্টেশন মাস্টার সমর দে। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পরও তাকে কসবা থেকে ফৌজদারহাট স্টেশনে বদলি করা হয়েছে। আর তাকে এসব অপকর্মে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৩ মে) রেল পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশনে কর্মরত স্টেশন মাস্টার সমর দে (৪০) টিকেট বিক্রির ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধ।

জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী টিকিট বিক্রির টাকা প্রতিদিন বুঝে নেওয়া নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেই সময় সমর দে’র কাছ থেকে টাকা বুঝে নেননি আনসার আলী। আত্মসাতের বিষয়টি জানার পরও গোপন করে তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন ইতি ধরকে। এরপর বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন আনসার আলী। দায়িত্ব পেয়েই আনসার আলী বরখাস্ত হওয়া সমর দে-কে গত ১৭ মে দপ্তরাদেশের মাধ্যমে কসবা থেকে ফৌজদারহাট জংশন স্টেশনে বদলির আদেশ করেন, যা বিধি বহির্ভূত।

এছাড়া বিশেষ সুবিধা পেতে প্রতি মাসে সমর দে ২০ হাজার টাকা মাসোহারা দিতেন তৎকালীন বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পূর্ব) ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে। এছাড়া মোটা অংকের বিনিময়ে বরখাস্ত হওয়ার পরও সমর দে-কে বদলির সুপারিশও করেন তিনি।

সম্প্রতি চাকরি দেওয়ার নামে ১২ লাখ টাকা নেওয়ায় সুখেন্দ্র নাথ সরকার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সমর দে’র বিরুদ্ধে দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করেন।

এর আগে মে মাসের শুরুতে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পূর্ব) হিসেবে ইতি ধর দায়িত্বে যোগ দেওয়ার পর সমর দের ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরে ফেলেন।

এরপর গোপনীয়তা রক্ষা করে সমর দে’র স্ত্রীকে ওই টাকা ২৩ মের মধ্যে পরিশোধের সময় দেন। কিন্তু সে টাকা ফেরত দেননি সমরের স্ত্রী।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চাকরির নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সমর দে। এরপর পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচতে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে মানববন্ধন করান তিনি। এরপরও এক ভুক্তভোগী ১২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য মামলা করেছেন।

টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে স্টেশন মাস্টার সমর দে’র মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীর মুঠোফোনে একাধিবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর ফোনে এসএমএস দিয়ে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

টাকা আত্মসাতের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর বলেন, ‘আত্মসাৎ করা টাকা তার স্ত্রী ফেরত দেবে বলেছেন।’

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিকে কিভাবে বদলি করা হলো— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার সাহেব ভালো বলতে পারবেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!