রেজাউলের সমর্থনে রঙিন পোস্টার এমপি লতিফের ‘নারী শক্তি’র

নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিমের সমর্থনে রঙিন পোস্টার ছেপে প্রচারণা করছে ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি—চট্টগ্রাম ১১’ নামে একটি সংগঠন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ৯ মার্চের আগে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই। এছাড়া কোনো অবস্থাতেই রঙিন পোস্টারও ছাপানোর অনুমতি নেই। এ কারণে পোস্টারটি ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বিবি মরিয়ম। এছাড়া এর পরিচালক হিসেবে আমেনা বেগম মিনা, গুলনাহার বেগম, রুবি আকতার এবং শাহনাজ বেগমের নাম গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে।

অন্যদিকে স্বাধীনতা নারী শক্তির সভাপতি বিবি মরিয়ম নিজেও এবার চসিক নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) নগরীর দেওয়ানহাট, টাইগারপাস মোড়, লালখান বাজার, বাদুরতলা, আসকারদীঘির পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’ নামে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে লাগানো একটি রঙিন পোস্টার দেখা যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ছবি সম্বলিত এই পোস্টারটিতে লেখা হয়েছে, ‘দক্ষ দেখে পক্ষ নিন, পাশে থাকার সুযোগ দিন, নগরবাসীর দোয়া চাই, মা বোনদের বলে যাই’— এর নিচে সংগঠনের নাম লেখা আছে ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি চট্টগ্রাম ১১’।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এই পোস্টারের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক এমএ লতিফ এমপি ও সভাপতি বিবি মরিয়মের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এমএ লতিফ বলছেন, এই পোস্টারে আচরণবিধি ভঙ্গ হওয়ার মত কোন কিছুই নেই। কাজেই এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক।

অন্যদিকে সংগঠনের আহ্বায়ক বিবি মরিয়ম বলছেন, ‘এই ধরনের পোস্টার তার ফেসবুক পেইজে ছেড়েছেন। তবে প্রিন্ট করিয়ে শহরে লাগানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।’ তাকে ফাঁসাতে কেউ এই ষড়যন্ত্র করছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন ২৮, ২৯ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিবি মরিয়ম।

পোস্টারটির বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম ১১ আসনের সাংসদ এমএ লতিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে তিনি সংগঠনটির সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে নেন। তবে পোস্টারের বিষয়ে আলাপ করতে গেলে তিনি বলেন, ‘যে পোস্টার ছাপানো হয়েছে সেখানে নির্বাচনের কোন কথা তো নেই। শুধুমাত্র সৎ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহবান করা হয়েছে।’ পোস্টারে রেজাউলের ছবি দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে জানালে তিনি পোস্টারের ছবিটি তাকে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ছবিটি পাঠানোর পর তিনি বলেন, ‘পোস্টারে রেজাউল করিমের কোন নাম নেই, নৌকার কথাও লেখা নেই। কাজে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি।’

তবে এমএ লতিফ পোস্টার ছাপানো বা লাগানোর কথা অস্বীকার না করলেও সংগঠনের আহ্বায়ক বিবি মরিয়মের বক্তব্য পুরো উল্টো। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এমন কোন পোস্টার করাই হয়নি। এমপি সাহেব (এমএ লতিফ) ও আমার অনুমতি ছাড়া এমন পোস্টার ছাপানোর কোন সুযোগ নেই। আমরা দুজন এই পোস্টারের বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা কেবল ফেসবুক পেইজে এই পোস্টার দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এই পোস্টার লাগিয়েছে। আমার মনোনয়ন নিয়েও একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখন আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি তাই একই লোকগুলো এই ষড়যন্ত্র করতে পারে।’

সংসদ সদস্য এমএ লতিফ এই পোস্টারে নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের কোন কারণ না দেখলেও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এই পোস্টারে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তারা।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘পোস্টারটি অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধির সাথে সাংঘর্ষিক। ৯ মার্চের আগে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কারও প্রচার প্রচারণা করার সুযোগ নেই। তার ওপর রঙিন পোস্টার তো করাই যাবে না। এরপরও যদি কেউ এটা করে তাকে আমরা কঠোর নজরদারিতে রাখবো। আমরা এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!