রাঙ্গামাটিতে ২ হত্যাকান্ডে কোনো গ্রেফতার নেই

রাঙ্গামাটিতে ২ হত্যাকান্ডে কোনো গ্রেফতার নেই 1রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : রাঙ্গামাটিতে পৃথক দুই হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত কোনো গ্রেফতার নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও হত্যাকরী কাউকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে এবং সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে মানবেতর পরিস্থিতিতে বাস করছে নিহতের উভয় পরিবার ও স্বজনরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাঙ্গামাটি সদরের কুতুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আহূত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেছেন নিহত পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। তারা অবিলম্বে সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা এবং ইউপিডিএফের সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটো হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ ডিসেম্বর জেলার নানিয়ারচর উপজেলা সদরের তৈচাকমা দজর পাড়া এলাকায় (১৮ মাইল) সাবেক ইউপি সদস্য অনাদী রঞ্জন চাকমাকে এবং তার ১০ দিন পর ১৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গার ধামাইছড়া মোনপাড়া নামক এলঅকায় ইউপিডিএফ সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা ওরফে প্লুটোকে নির্বিচারে গুলি করে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ দু’টি হত্যাকান্ডের জন্য নিহতের পরিবারের পক্ষে ইউপিডিএফ দলছুট নেতা তরুণ জ্যোতি চাকমা তরু ওরফে বর্মার নেতৃত্বাধীন ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ নামক সন্ত্রাসীদের দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার ঘটনারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অনাদী রঞ্জন চাকমার ছেলে রিন্টু চাকমা। এ সময় অনল বিকাশ চাকমা প্লুটের স্ত্রী আলপনা চাকমা ও অনাদী রঞ্জন চাকমার স্ত্রী মনাদেবী চাকমাসহ দুই পরিবারের ১৫-১৬ সদস্য ও স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ওই দু’হত্যায় আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ করে বলা হায়, ঘটনার পর অনেক দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ অপরাধীদের এখনও গ্রেফতার করেনি। গ্রেফতারের কোনো চেষ্টা আছে বলেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর সাবেক ইউপি সদস্য সেন্টু চাকমার নেতৃত্বে ‘নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি’ এবং নানিয়াচরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। কিন্তু এরপরও সরকার নির্বিকার। অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা খুনের ঘটনার দায় স্বীকার করে বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে এবং একের পর এক খুন ও অপরহণসহ নানা ধরনের অপরাধ করে চলেছে। স্মারকলিপি দেয়ার পরদিনই বন্দুকভাঙ্গায় ইউপিডিএফ সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা প্লুটোকে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা গত ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের অপর এক সংগঠক মিঠুন চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
অনল বিকাশ চাকমার স্ত্রী আলপনা চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই”। তার স্বামীকে কারা খুন করেছে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নে আলপনা বলেন, “আমার স্বামী ইউপিডিএফে কাজ করায় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা খুন করেছে।”
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অনাদী, প্লুটো ও মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। হত্যাকারীরা নানিয়াচর জোন থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরে অস্ত্রশস্ত্রসহ গুল্যাছড়ি, ছ’কুড়ি বিল ও ফিরিঙ্গি পাড়ায় অবস্থান নিয়ে মহড়া দেয়। এমনকি নানিয়াচর থানা সদরে টিএন্ডটি বাজারেও তারা প্রায় সময় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, যা আমাদের ও এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমরা জানতে চাই, তাহলে কি নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের সাথে নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসী ও খুনীদের যোগসাজশ ও বোঝাপড়া রয়েছে?
এতে আরও উল্লেখ করে বলা হয়, তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা একজন দাগী আসামি। নব্য মুখোশ বাহিনীর প্রধান তপন বিকাশ চাকমা ওরফে বর্মা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে দীর্ঘ দিন ধরে একজন দাগী আসামি ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। তার বিরুদ্ধে কেবল নানিয়াচর থানায় খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল- তৎকালীন ঘিলাছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন নুরুল আলম গাজী হত্যা মামলা (২০০৬ সালে)। এছাড়া জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী ও বরকল সহ বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আরো মামলা থাকতে পারে। তার গ্রুপের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধেও একইভাবে বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হল- অবিলম্বে অনাদী রঞ্জন চাকমা, অনল বিকাশ চাকমা প্লুটো ও মিঠুন চাকমার খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বর্মা-তরুর নেতৃত্বাধীন ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনটি নিষিদ্ধ করে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে এবং এসব সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর কাউকে অনাদী, প্লূটো ও মিঠুনের মতো অকালে প্রাণ হারাতে না হয় এবং আর কোনো পরিবারকে এ ধরনের ভাগ্য বরণ করতে না হয়, তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!