রাঙামাটিতে বিজু, বৈসুক ও সাংগ্রাই উপলক্ষে শোভাযাত্রা

রাঙামাটিতে বিজু, বৈসুক ও সাংগ্রাই উপলক্ষে শোভাযাত্রা 1রাঙামাটি প্রতিনিধি :আদিবাসী ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিকাশে ঐক্যবদ্ধ হোন, উপজাতীবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন”শ্লোগানকে নিয়ে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে বিজু মহাৎসব উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠান মালা।
এ উপলক্ষে রোববার সকাল ৯ ঘটিকার সময়ে পৌর সভা মাঠ প্রাঙ্গনেউদ্ধোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ।অনষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৯৯ নং আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার এমপি। উদ্বোধক হিসেবে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি হিসেব রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ড: মানিকলাল দেওয়ান । অনুষ্ঠানের সভাপত্বি করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।
ঊষাতন তালুকদার এমপি বলেন, বিজু মানে নতুন জীবন প্রত্যাশা। বিজু মানে নব দিগন্তের চেতনা। বিজুর মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আদিবাসীদের বিজুু নামটি পরর্বিতন করে বৈসাবি নামকরণ হচ্ছে।আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, এমনকি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে নয়। আমরা নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতেছি। বাংলাদেশ সরকার জঙ্গী দমনে যে অক্লান্ত ভাবে যুদ্ধ ও কৌশল অবলম্ভন করে যাচ্ছে তা দেশবাসীর জন্য মঙ্গলময়। তার পাশাপশি পার্বত্য অঞ্চলের জনগনের কথা ভাবতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত অসহায় ও নিপীড়িত জনগণের দাবী লক্ষ রাখতে হবে।তবেই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে।এছাড়া তিনি আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনও সেনাশাসন চলছে। নিরীহ জনগন এখন নিজ বসতবাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারতেছে না।নিজ বসতবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বড় সমস্যা ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ বাস্তবায়ন তা শুধু মাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বইচ্ছা থাকলে হবেনা সকল উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও দেশবাসীর আগ্রহ বা ইচ্ছা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসীরা নয় সমতলের আদিবাসীরাও দমন-নিপীড়ন ভাবে বসবাস করতেছে। যা খুবই দু:খ জনক। এছাড়া তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে সাংবাদিকরাও বিস্তারিত লেখতে পারতেছেনা । প্রচার হচ্ছেনা সঠিক বস্তুনিষ্ট সংবাদ। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে দমন করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পুরাতন বছরের পর নতুন বছর চলে আসে। সমতলে বসবাসরত মানুষের মুখে বাংলা নবর্ষের কথা শোনা যায় কিন্তু চৈত্র সংক্রান্তি কথাটি শোনা যায়না।তিনি আরও বলেন ,প্রথাগত আইন ১৯৫৮ সালে ৩রা মার্চের অধিগ্রহণ আইন সেটির মাধ্যমে রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাদ দিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ও খাগড়াছড়ির কিছু অংশ পানিতে ডুবিয়ে যায় ।প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি হারা জনগন তিন ভাগ ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে । যা আমি ব্যক্তিগত পক্ষে একাত্ত্বতা পোষন করি।কিন্তু সেই ভূমি হারা জনগন এখনও সেই ক্ষতি পূরণ পায়নি। প্রধানমন্ত্রী কোনটি প্রথাগত আইন কোনটি লিখিত আইন সেটি তাঁর অজানার বিষয় নয় । পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে পাবত্য চট্টগ্রাম বিশেষ আইনের ধারা ও আইন রয়েছে সেগুলো সেই বিশেষ আইনে হতে হবে। কিন্তু এটি যখন মন্ত্রী সভাতে যায় সেটির বিষয় ভুলে যায়। তবে অনেকে অনেক ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে বিজু উৎসবকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতে চলছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। বিজু উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিভিন্ন সংস্কৃতি মেলা, বিভিন্ন আদিবাসী খেলাধূলা সহ বিভিন্ন কর্মসূচী। বিজুর সঙ্গে একাত্ততা হয়ে আবহমান বাংলার নবর্বষবরণ উপলক্ষে বৈশাখীর বর্ণাঢ্য কর্মসূচী ঘিরে মেঠে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ উৎসবের আমেজ উৎসব।
উৎসবটি ঘিরের ঘরে ঘরে চলছে আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি । প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে পালন করা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটি। প্রথমদিনে চাকমারা ফুলবিজু , মারমারা পাইছোয়াই, ত্রিপুরারা হারিবৈসুক এবং দ্বিতীয় দিনে অর্থ্যাৎ উৎসবের প্রধান দিনটিকে চাকমারা মূলবিজু , মারমারা সাংক্রাইং আক্যা আর ত্রিপুরারা বৈসুকমা এবং শেষ দিন বাংলা নবর্ষের প্রথমদিন চাকমা গোজ্যোপোজ্যা দিন, মারমারা সাংক্রাই আপ্যাইং ও ত্রিপুরারা বিসিকাতাল নামে আখ্যায়িত।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের পরে রাঙামাটি পৌরসভা মাঠ প্রাঙ্গন থেকে বিজু র‌্যালি ও শোভাযাত্রা বাহির হয়ে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমীতে এসে র‌্যালি ও শোভাযাত্রাটি শেষ করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!