‘মেইনগুন নো ফুরে, আর অর্ধেক ফুইড়জেদে’

শুলকবহরে আগুন নেভার পর রহস্যঘেরা আক্ষেপ

চট্টগ্রামের শুলকবহরের ডেকোরেশন গলিতে সাতদিনের ব্যবধানে আবারো আগুন লাগার ঘটনায় ভয়াবহ আতঙ্ক ভর করেছে এলাকাটির স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ওই গলির মো. হূমায়ুনের মালিকানাধীন সাত্তার কলোনিতে আগুনে পুড়ে ছাই হয় প্রায় ৮০টি কাঁচাবসত ঘর। এর আগে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) একই গলির বাবু কলোনিতে পুড়ে ছাই হয়েছিল দেড় শতাধিক ঘর।

ওই কলোনির বাসিন্দাদের দাবি কোন দুর্ঘটনা নয় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ‘দখলশূন্য’ করতে বারবার আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই গলির কলোনিগুলোতে। এদিকে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে জাফর মাঝি নামে এক বৃদ্ধকে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা।

ওই এলাকার বাসিন্দা আনিস মিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর জাফর মাঝি নামের এক বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘মেইনগুন নো ফুরে, আর অর্ধেক ফুইড়জেদে’ (আসলগুলো পোড়েনি, আর অর্ধেক পুড়েছে)। একথা শুনতে পেয়ে ওই বৃদ্ধকে মারধর শুরু করেন উপস্থিত কিছু লোকজন।

পাঁচলাইশ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভুঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সন্দেহে একজনকে আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। ব্যক্তিটিকে হেফাজতে নিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘পরপর আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। তাই বিষয়টি গুজবও হতে পারে। তাবে যাই হোক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে স্থানীয়রা বলেন, পেশায় মাঝি (শ্রমিকের সর্দার) কাজ করেন সন্দেহভাজন জাফর। থাকতেন গত সপ্তাহে পুড়ে ছাই হওয়া জমির মালিক শাহনেওয়াজ বাবুর বাসায়। তবে গত সপ্তাহে ওই গলির শাহনেওয়াজ বাবুর কলোনি পুড়ে ছাই হওয়ার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে খোলা আকাশের নিচে এসে থাকতে শুরু করেছেন তিনি। কলোনির বাসিন্দাদের দাবি, ডেকোরেশন গলির বেশ কয়েকটি কলোনির মালিকদের মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। তাই ‘দখল শুন্য করতে’ আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক বস্তিতে।

আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া কলোনি দুটির বাসিন্দারা জানান, হুমায়ুন আর বাবুর পাশাপাশি পিয়ার আহমেদ নামে আরেক ব্যক্তির কিছু জমি আছে ওই বস্তির জায়গায়।

পিয়ার আহমেদের নাতি আবদুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, বছর খানেক আগে বাবু কলোনির মালিক শাহ নেওয়াজ বাবু গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে তাদের হুমকিও দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বস্তির জমি নিয়ে মামলা আছে। ভাইয়ে ভাইয়ে জমি নিয়ে বিরোধ আছে। আমাদের সঙ্গেও জমি নিয়ে ঝামেলা আছে। ওরা এটা পরিকল্পিতভাবে করেছে হতে পারে।’

অন্যদিকে শাহ নেওয়াজও রহস্যজনক মনে করছে সপ্তাহ ব্যবধানে ঘটে যাওয়া দুটি আগুনের ঘটনাকে। তবে একই গলিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার আগুন লাগার ঘটনায় কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্টভাবে সন্দেহ না করলেও জমির মালিক শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘এবারের আগুনটা কেমন সন্দেহজনক মনে হইছে। সরকারি একাধিক সংস্থা আছে তারা তদন্ত করুক বিষয়টি।’

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!