মিরসরাইয়ে বৃদ্ধসহ এক পরিবারের ৭ সদস্যের ওপর ইউপি মেম্বারের হামলা

মিরসরাইয়ের ইছাখালীতে ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক পরিবারের সাত সদস্যকে বেধড়ক মারধর করেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও তার ভাই। ওই পরিবারের সদস্যদের ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে মারাত্মক আহত করে, পরে আহতদের হাসপাতালে নিতে না পারার জন্য অবরুদ্ধ করে রাখে ওই ইউপি সদস্যের লোকজন। হামলা থেকে বাদ যাননি বৃদ্ধাও।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ গ্রামে। হামলাকারী নিতাই চরণ দাস ইছাখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, বাড়ির পাশে একটি ছোট রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলছিলো ওই এলাকার বাসিন্দা ছায়া রঞ্জন দাস (৫৮) এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাসের সাথে। বিবাদমান ওই জায়গা নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় ওই রাস্তার মাটি কাটার জন্য বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে স্কেভেটর নিয়ে আসে নিতাই ও তার ভাইসহ আরো বেশ কয়েকজন। মাটি কাটতে বাধা দিতে গেলে ছায়া রঞ্জন দাস, তার মা প্রমীলা বালা দাস ((৭৫), ছায়া রঞ্জনের স্ত্রী অঞ্জলী বালা দাস (৫০), ছেলে সমির চন্দ্র দাস, ছায়া রঞ্জনের ভাই পরিমল দাস (৫০), পরিমলের স্ত্রী দিবু মনি বালা দাস (৪৫), স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ডালিম দাস ও তার স্ত্রী চিনু দাসকে পিটিয়ে আহত করে ইউপি সদস্য ও তার লোকজন। এ সময় ছায়া রঞ্জন দাসের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। তার মা প্রমীলা বালাকে প্রকাশ্যে মারধর করে ইউপি সদস্য নিতাইয়ের ভাই দীপংকর দাস, কৃষ্ণ দাস, রাম দাস ও লক্ষণ দাস।

ছায়া রঞ্জন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব হাঁটাচলার জায়গায় জোরপূর্বক মাটি কাটার জন্য স্কেভেটর নিয়ে আসে নিতাই মেম্বার ও তার ভাইসহ কয়েকজন। আমরা বাধা দিতে গেলে পরিবারের সব সদস্যদের মারধর করে তারা। ইট দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালে যেতে চাইলে সে সকল সিএনজি অটোরিক্সা ড্রাইভারকেও হুমকি দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় যাতে আমি হাসপাতালে না যেতে পারি! ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আমি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিই।’

হামলার শিকার স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিনু দাস বলেন, ৭৫ বছর বয়সী প্রমীলা বালা দাসের উপর দফায় দফায় হামলা করে মেম্বার ও তার ভাইসহ তাদের পক্ষের লোকজন। স্থানীয়রা এগিয়ে আসতে চাইলে তাদেরও হুমকি দেয় তারা।

এদিকে দুই পক্ষই পরষ্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন । জোরারগঞ্জ থানায় ছায়া রঞ্জনের পরিবারের সদস্যদের অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিয়েছে স্বয়ং মারধরের অভিযোগে অভিযুক্ত নিতাই চরন দাস। হামলার শিকার ছায়া রঞ্জনও শুক্রবার ( ৩ মে) একই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নিতাই চরনের বিরুদ্ধে।

উভয় অভিযোগই তদন্ত করছেন জোরারগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক সুজয় কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘জায়গাটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ আছে। বৃহষ্পতিবার মেম্বার নিতাই একটি অভিযোগ দিয়েছে। শুক্রবার অভিযোগ দিয়েছে ছায়া রঞ্জন। শীঘ্রই দুটি অভিযোগের তদন্ত করা হবে।’

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাস বলেন, ‘ছায়া রঞ্জন ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় জড়িয়েছে। এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই।’

ছায়া রঞ্জনের মাথা কিভাবে ফাটল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , ‘কারো আঁচড়ে হয়তো রক্ত বের হয়েছে। নখের আঁচড়ে মাথা ফাটা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।’

মাটি কাটা না হলে ওই স্থানে স্টেভেটর কিভাবে এলো এই প্রশ্নের জবাবে নিতাই বলেন, ‘আগে থেকেই স্টেভেটর সেখানে ছিলো।’

ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘দুইপক্ষের মধ্যে জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে। স্থানীয়ভাবে পরিমাপের সময় ছায়া রঞ্জনের জমির পরিমাণ বেশি ছিলো সেখানে। এই ঘটনায় মারামারির খবর শুনেছি আমি।’

উল্লেখ্য, স্থানীয় ইউপি সদস্য নিতাই চরণ দাস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সালিশ বাণিজ্য, সরকারি সেবা প্রদানের কমিশনসহ নানা অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত হয়েছেন করেন স্থানীয়রা। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা থেকে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এসসি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!