ভুয়া ঋণের জাল সোনালী ব্যাংকে, নোটিশ পেয়ে অবাক ২১৮ কৃষক

২১৮ জন কৃষক পড়েছেন ভুয়া ঋণের ফাঁদে। সম্প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে তাদের নামে নোটিশ জারি হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারে কৃষকরা। এসব ঋণ ২০১২ ও ২০১৩ সালে নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ডিপোজিট করলে এবং বিদেশ থেকে কেউ টাকা পাঠালেই তা ঋণের নামে কেটে নেওয়া হচ্ছে। এমন প্রতারণার বিষয়ে ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এমন ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটি জেলার লংগদুতে। ঋণের নামে এমন হয়রানির প্রতিবাদে ভুক্তভোগী কৃষকরা রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকালে লংগদু সদরে সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করেন, ২০১২ ও ২০১৩ সালের দিকে স্থানীয় হেলাল, সেলিম, মিষ্টি কালামসহ কয়েকজন দালাল সরকারি অনুদান দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের (জাতীয় পরিচয়পত্র) ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করে। এরপর এই কৃষকদের থেকে ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নেয়—যা অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র কৃষকরা বুঝতে পারেনি।

পরে কোনো কোনো কৃষককে ৫০০ বা ১০০০ করে টাকা দিয়ে বিদায় করে দালালচক্র। বিনিময়ে কৃষকদের নামে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বরাদ্দ নিয়ে নেয় অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালালচক্র।

যে সময়ে কথিত ঋণ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, ভুক্তভোগী কৃষকরা সেই ঋণের ব্যাপারে জানতে পারেন প্রায় ১০ থেকে ১১ বছর আগে।

ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন, সম্প্রতি আমাদের নামে হঠাৎ করে নোটিশ জারি করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে যাই। আমাদের নামে যে ভুয়া ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার বড় প্রমাণ আমাদের সবার এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করা হয়েছে।

জানা গেছে, কথিত এনআইডি কার্ডে উল্লেখিত নাম, জন্ম তারিখ, পিতা ও মাতার নামের অংশ ঠিক রেখে পেছনের ঠিকানার অংশটি পরিবর্তন করে মাইনীমুখ ইউনিয়নের সোনাই এলাকার করা হয়েছে। যা ভুক্তভোগী ওই কৃষকদের প্রকৃত ঠিকানাও নয়। এভাবেই সবার সঙ্গে প্রতারণা করে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকার ২১৮ জনের নামে এই ভুয়া ঋণের তালিকা পেয়েছি। যারা কেউ এই ঋণ নেয়নি। এখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নানাভাবে আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ দিচ্ছে। কারও অ্যাকাউন্টে স্বজনরা টাকা পাঠালে সেখান থেকে ঋণের টাকা কেটে রেখে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম জানান, তার পক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়।

লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত আছি। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা দালাল চক্র মিলে এই আর্থিক অনিয়ম করেছে। এই ঋণের বোঝা দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব না। এ বিষয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করে এটার একটা সুরাহা করবেন।’

ডিজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!