ভালোবাসার তাজমহলে বাংলাদেশের ১০০ তরুণ, ইতিহাসের প্রতিধ্বনি আগ্রা ফোর্টে

ভারতের মোঘল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন তাজমহল ও আগ্রা ফোর্টে দিন কাটালো বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ সদস্য। এ সময় তারা মোঘল স্থাপত্যের অনন্য শৈলী ও কারুকাজ ছাড়াও একইসঙ্গে ঘুরে দেখেন স্থাপনা দুটির প্রতিটি জায়গা।

ভালোবাসার তাজমহলে বাংলাদেশের ১০০ তরুণ, ইতিহাসের প্রতিধ্বনি আগ্রা ফোর্টে 1

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশের আগ্রার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ১০০ তরুণ প্রতিনিধির গাড়িবহর। তিনটি গাড়িতে ভাগ হয়ে দুপুর ১২টায় পৌঁছে।

ভ্রমণের শুরুতে সপ্তম আশ্চর্যের একটি স্থাপনা মোঘল সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের নিদর্শন হিসেবে খ্যাত তাজমহলে যান প্রতিনিধিদলের তরুণ সদস্যরা। সেখানে তারা মোঘল স্থাপত্যশৈলী দেখেন। একইসঙ্গে দেখেন শ্বেত মার্বেল পাথরে নির্মিত স্থাপনাটির বিভিন্ন কারুকাজ।

এরপর যাকে উৎসর্গ করে এই তাজমহল বানানো হয়, শাহজাহানের সেই প্রিয় স্ত্রী মমতাজের সমাধিতে যান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখানকার স্থাপনায়ও ছিল নির্মাণশ্রমিকদের দারুণ মুন্সিয়ানার ছাপ।

সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাজমহল জাদুঘর ঘুরে দেখেন। জাদুঘরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছবি এবং লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

তৎকালীন মোঘল সম্রাট শাহজাজান তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দেশের স্থপতি ও নির্মাণশ্রমিকদের দিয়ে ২১ বছরের প্রচেষ্টায় ১৬৫৩ সালে তৈরি করেন তাজমহল। তবে বিভিন্ন সময়ে সংস্কার হয় এই স্থাপনা। এখানে মমতাজের সঙ্গে শায়িত আছেন সম্রাট শাহজাহানও।

তাজমহল পরিদর্শন শেষে দুপুর তিনটায় খাবার শেষ করে বিকাল চারটায় আগ্রা ফোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ সদস্য। অল্প কিছু সময় পর পৌঁছে যায় গন্তব্যে। সেখানে প্রবেশমুখে ফোর্ট বা দুর্গের বিশাল সীমানা দেয়ালের দেখা মেলে। লাল ইটের সঙ্গে চুন-সুড়কির মিশ্রণে নির্মিত এসব স্থাপনা এবং স্থাপনার গায়ে থাকা কারুকাজ দেখেন প্রতিনিধি সদস্যরা।

আগ্রা ফোর্টের চারদিকের প্রতিটি ভবন ঘুরে দেখেন তারা। একইসঙ্গে দেখেন ফোর্টের একপ্রান্তে থাকা ‘মিনা মসজিদের’ নির্মাণশৈলী। সম্রাট হুমায়ুন এই ফোর্টেই রাজমুকুট মাথায় পড়েন। পরে ১৫৬৫ সালে এটির সংস্কার শুরু করেন, যা ১৫৭৩ সালে শেষ হয়।

এই ফোর্ট থেকে দেখা যায় তাজমহল। ছেলে আওরঙ্গজেবের কাছে ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর আগ্রা ফোর্টে বন্দি জীবন কাটে সম্রাট শাহজাহানের। তখন কারাগার থেকে দূরের তাজমহল দেখেই দিন কাটতো তাঁর।

আগ্রা ফোর্টকে ১৯৮২ এবং তাজমহলকে ১৯৮৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।

তরুণ প্রতিনিধিদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ নুরাইন বলেন, ‘পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের একটি তাজমহল। এছাড়া আগ্রা ফোর্টও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি। প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে যেসব স্থাপত্যশৈলী প্রতিটি স্থাপনায় তুলে ধরা হয়েছে, তা সত্যি অসাধারণ।’

প্রতিনিধিদের আরেকজন নিউজ টোয়েন্টিফোরের অ্যাসিসটেন্ট প্রডিউসার আতিকা রহমান বলেন, ‘মোঘল আমলে নির্মিত এসব স্থাপনায় মার্বেল পাথরের ওপর খোদাই করা কাজগুলো নিখুঁতভাবে করা হয়েছে।’

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ও ভারতীয় হাই কমিশনের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের ১০০ তরুণ প্রতিনিধি ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ প্রোগ্রামে (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানে দিল্লি এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তাদের নয়াদিল্লির একটি তারকা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ সদস্যের সাক্ষাৎ ও নৈশভোজের কথা রয়েছে।

‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১০০ জন তরুণ প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে ডাক্তার, উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার তরুণ-তরুণীরা থাকেন।

মূলত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। ভারত সরকারের অর্থায়নে ১০০ জন ইয়ুথ ডেলিগেট হিসেবে প্রতিবছর দেশটি ভ্রমণের সুযোগ পান।

২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ইচ্ছায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি। এর পর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে সফরের আয়োজন করে দেশটির হাইকমিশন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!