বাঁশখালীতে ৫ দিনে দুই দিনমজুরের মৃত্যু, খাদ্যাভাবে মারা গেল হাতিও

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কালীপুর রেঞ্জ ও জলদি রেঞ্জ এলাকায় গত ৫ দিনের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে ২ দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে খাদ্যাভাবে মারা গেছে এক বন্যহাতি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকাল ৫ টায় কালীপুর রেঞ্জের জঙ্গল বাণীগ্রাম এলাকায় হাতির আক্রমণে আব্দুল মোমিন নামের ৫৫ বছর বয়সী এক দিনমজুরের মারা গেছেন। তিনি বাণীগ্রামের ছমাদার পাড়ার আব্দুস ছালামের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি পুঁইছড়ি রেঞ্জের জঙ্গল নাপোড়া এলাকায় রাতে আলুক্ষেত পাহারা দেওয়ার সময় হাতির আক্রমণে মারা যান ৩৭ বছর বয়সী আরেক দিনমজুর জহরলাল দেব। এছাড়া গত ৫ জানুয়ারি একই রেঞ্জের বাঁশখালী ইকোপার্ক সংলগ্ন চাম্বল জঙ্গল পাহাড়ে খাদ্যাভাবে এক হাতির মৃত্যু হয়েছে। হাতিটির মৃতদেহ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়ার নেতৃত্বে এক তদন্তকারী দল ময়নাতদন্ত শেষে পাহাড়েই মাটিচাপা দেন।

স্থানীয় গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা এখন অরক্ষিত। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিদিন বনদস্যুরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে গাছ ও পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। প্রশাসন কিংবা বা বন কর্মকর্তাদের কোনো তদারকি নেই।

অভিযোগ আছে, কতিপয় বন কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসোহারা নিয়ে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটায় জড়িত। ফলে বনদস্যু ও পাহাড় খেকোরা বেপরোয়া। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ব্যাপকহারে ধ্বংস লীলার কারণে বনের পশুপাখিরা খাদ্য সংকট ও বাস্তুসংস্থান সংকটে পড়েছে। বন্যহাতিরা প্রতিদিন পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে এসে হামলা করছে এবং ক্ষেত খামারের ক্ষতি করছে। অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি ভাংছে।

সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন বলেন, ‌‌‌‌বনাঞ্চল রক্ষায় বাঁশখালীতে কোনো প্রশাসন নেই। আমরা উপজেলা সমন্বয় সভায় বন্যহাতির আক্রমণ নিয়ে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’

জলদি রেঞ্জের রেঞ্জার (বন কর্মকর্তা) আনিচ্ছুজ্জামান শেখ বলেন, সম্প্রতি কেন হাতির আক্রমণ ও লোকালয়ে কেন হাতি এসে পড়ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাতির মৃত্যু ও হাতির আক্রমণে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আমাদের টিম মাঠে রয়েছে।

কালীপুর রেঞ্জের রেঞ্জার (বন কর্মকর্তা) বলেন, সাধনপুর ও পুকুরিয়ায় ব্যাপকহারে বেড়েছে হাতির আক্রমণ। আজ বৃহস্পতিবারও হাতির আক্রমণে আব্দুল মোমিনের মৃত্যু আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে বনদস্যু ও পাহাড় খেকোদের আমরা লোকবলের অভাবে দমন করতে পারছি না। তারা সঙ্গবদ্ধ ও কৌশলী।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ে মারা যাওয়া হাতিটি বয়োবৃদ্ধ ছিল। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, শারীরিক অক্ষমতা এবং খাদ্য সংকটে কোনো এক সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। হাতিটির ময়নাতদন্ত শেষে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!