বন্দর-পতেঙ্গায় ‘নুরি বাহিনী’র ভয় দেখালেন লতিফ, ‘ভদ্রতা’ ছাড়ার ঘোষণা (ভিডিওসহ)

‘এমপি ফুড’ বিতরণ করে আচরণবিধিকে বুড়ো আঙ্গুল

নির্বাচনী প্রচারণায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এমএ লতিফ। প্রচারণায় তিনি নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চোর, চাঁদাবাজ, মাস্তান, ডাকাত বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

এছাড়া এমএ লতিফ ভোটের জন্য ‘নুরি বাহিনী’ প্রস্তুত করে রেখেছেন বলেও জানান। একইসঙ্গে তিনি নিজে ‘এ মাস থেকে আর ভদ্র নাই’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নির্বাচনী এক সভায় তিনি এই ধরনের বক্তব্য দেন। এছাড়া অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেও শোনা গেছে। সভা থেকে ফেসবুক লাইভে যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী। তার ভিডিওতে এসব বিষয় উঠে আসে।

প্রচারণা সভায় এমএ লতিফ চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, যে খানকির পোয়া কেওরে ধমকি দিবু, শুধু আরে হবর দিবা (যে খানকির ছেলে কাউকে ধমক দেবে, শুধু আমাকে জানাবেন)। আগে আই বাহিনী ন বানাই, এহন বানাই (আগে আমি বাহিনী বানাইনি, এখন বানিয়েছি)।

তিনি আরও বলেন, ‘নুরি বাহিনী’ প্রস্তুত। তাদের কেন ডাকা হয় না এ নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। তারা আসলে এ সভায় জায়গা দেওয়া যাবে না।

এর আগে তিনি নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে কটূক্তি করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে টাকা-পয়সা দিয়েছে, নিয়ে নিন। এসব ডাকাতির টাকা। চট্টগ্রাম শহরের যত চোর, চাঁদাবাজ, মাস্তান, ডাকাত আছে সব এক হয়েছে। ভাল মানুষ সব এক হয়েছি। খারাপ মানুষ আলাদা হয়েছে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমি ভদ্র ছিলাম। আমাকে মাফ করে দিবেন। এ মাস থেকে আর ভদ্র নাই।

নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে লতিফ বলেন, সবাই খুদ (চালের খুদ) খুঁজে নিয়েছে। খুদ খাওয়ার জন্য চোরের পিছে ঘুরছে।

তিনি বলেন, আমার ভোট অন্যজনে দিয়ে দিচ্ছে, এ দোষ নিশ্চয়ই আমার। কারণ আপনি না খেলে আপনার খাবার হাঁস, মুরগি, পোকামাকড় খেয়ে নেবে। এছাড়া রাতে ভোট মারার সুযোগ নেই।

অন্য এলাকার এমপিদের মত আমি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করিনি উল্লেখ করে লতিফ বলেন, অনেকজন অনিয়ম করেছেন। অন্যায়কারী, চোর, ডাকাত বেড়ে গেছে।

তার এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে লতিফকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলে তা বাতিলের সুপারিশ করা হয় নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলের অন্য কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকেই সমর্থন দেবেন বলে ঘোষণা দেন নগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

ভোটারদের হাতে লতিফের ‘এমপি ফুড’
এদিকে এমএ লতিফের তত্ত্বাবধানে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভোটারদের মাঝে খাবার বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের অনুসারীরা।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে নির্বাচনী আসনের নেভী হাসপাতাল গেটের পাশে আলিশা পাড়ার রেললাইন এলাকায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন লতিফের অনুসারীরা।

তাদের বিতরণ করা ‘এমপি ফুড’ খাবারের প্যাকেটে নৌকার প্রার্থী এমএ লতিফের ছবি ছিল।

জিয়াউল হক সুমনের প্রচার সেল থেকে দাবি করা হয়, আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার মধ্যে এভাবে প্রার্থীর ছবি দিয়ে রঙিন প্যাকেটে খাবার বিতরণ এক ধরনের প্রচারণা। এই কায়দায় প্রচারণা কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালার সঙ্গে যায় না। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন।

অথচ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটারদের কোনো কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা উপহার দেওয়া যাবে না। প্রচারণার উদ্দেশ্যে ভোজের আয়োজন করে গণজামায়েত করলে আচরণবিধিমালার ৬ (খ), (গ), ১০ (চ) ও ১২ ধারা লঙ্ঘন হবে।

এ ব্যাপারে জানতে নৌকার প্রার্থী এমএ লতিফ এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে ফোন করলে তারা কেউ রিসিভ করেননি।

আরএস/বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!