বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ২২০ ডিজিটের ফাঁসে গ্রাহকের ভোগান্তি

লক হলেই গুণতে হচ্ছে ১৬০০ টাকা

চট্টগ্রামে প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে ২২০ ডিজিটের টোকেন ইনপুট পদ্ধতি। বিদ্যুতের অপচয় রোধ, চুরি ঠেকানো ও ভুতুড়ে বিল দূর করতে সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও চলছে বিদ্যুতের প্রিপেইড ব্যবস্থার মিটার। কিন্তু সুফলের পরিবর্তে অযাচিত ফি ও ব্যবহার পদ্ধতি গ্রাহকবান্ধব না হওয়ায় ক্রমেই এই পদ্ধতিকে ভোগান্তি বলে মনে করছেন গ্রাহকরা। সেই সাথে পান থেকে চুন খসলেই মিটার ‘লক’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তো আছেই।

এমন পরিস্থিতিতে প্রিপেইড পেমেন্ট সিস্টেমের মিটারকে ‘ডিজিটাল সিস্টেম’ বলে সাফাই গাইছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বিদ্যুতের দাম পরিবর্তনের কারণে এমন বহুল ডিজিটের কমান্ড। যা শুধু একবার আসবে। এই ২২০ ডিজিট রিচার্জের সাথে সেট হবে বিদ্যুতের নতুন রেট। তাছাড়া মিটার চুরি রোধ ও অবৈধ বিদ্যুৎ বিল ঠেকাতেই এমন লকিং সিস্টেম।

তবে এমন যুক্তি মানতে নারাজ গ্রাহকরা। তারা বলছেন, ডিজিটাল এই প্রিপেইড সিস্টেমের মিটার মোটেও ‘স্মার্ট’ নয়। প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ায় যখন মানুষ ঘরে বসেই গ্রহণ করছেন সেবা, সেখানে এই ডিজিটাল সিস্টেমে কোন সমস্যা দেখা দিলেই দৌড়াতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে। সেই সাথে কমান্ড ভুল হওয়া বা একটু অসতর্ক হলেই মিটার হয়ে যেতে পারে ‘লক’। সেই ‘লক’ খুলতে আবেদন করতে হয়, সাথে আছে ১ হাজার ৬০০ টাকা চার্জ। গ্রাহকরা বলছেন, এই মিটার ব্যবহারে সবমিলিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের।

বিদ্যুতের মাসিক মিটার রির্চাজ করে এসে রীতিমত চোখ কপালে উঠেছে বাকলিয়া এলাকার গৃহিণী মরিয়মের। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) মিটার রিচার্জ করার পর সেখানে ২০ ডিজিটের পরিবর্তে আসে ২২০ ডিজিট। বাসায় ফেরত এসে দুই বার রিচার্জের চেষ্টার পর বিফল হয়ে আবার ছুটে যাই বিদ্যুৎ অফিসে। সেখানে কর্মরতরা জানালেন ডিজিটের কোন ভুল নেই। নতুন রেট মিটারে সেট হওয়ার জন্য এই ডিজিট। পরে বাসায় ফিরে এসে এক প্রতিবেশিকে দিয়ে ২২০ ডিজিটের কমান্ড সফলভাবে রিচার্জ করাতে সক্ষম হই।’

হালিশহরের বাসিন্দা এরশাদ উল্লাহ জানান, ‘২২০ ডিজিট রিচার্জ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ভুল কমান্ড হওয়ার কারণে মিটারটি ‘লক’ হয়ে যায়। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ১ হাজার ৬০০ টাকা ‘জরিমানা’ গুণে খুলতে হয়েছে সেই ‘লক’।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু বাকলিয়া কিংবা হালিশহর নয়। পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের অধীনে থাকা আগ্রাবাদ, খুলশী, স্টেডিয়াম, রামপুর, মাদারবাড়ি, মোহরা, ষোলশহর, বিবিরহাট, বিতরণ বিভাগসহ ১০টি বিতরণ বিভাগের প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক এ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিদ্যুতের বর্ধিত দর কার্যকর হওয়ার পর যারা রিচার্জ করতে যাচ্ছেন তারা এ ভোগান্তিতে পড়ছেন।

মিটারের এমন ভোগান্তির ব্যাপারে জানতে চেয়ে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কুমার সেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই ভোগান্তিকে ‘সাময়িক’ উল্লেখ করে দিয়ে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেট চেঞ্জের কারণে এমন ঝামেলা হচ্ছে। এই পদ্ধতির ইনপুটে মিটারগুলোতে নতুন রেট ইনস্টল হচ্ছে।’

তবে সামগ্রিক সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট মিটার সিস্টেম চালু হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না।’

এএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!