পেকুয়ায় জমির ভোগদখল নিয়ে বিএনপি’র দু’পক্ষ মুখোমুখি: অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির সশস্ত্র মহড়ায় জনমনে আতংক

মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া:

চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ব্যাক্তি। সবার হাতে দেশি-বিদেশি অস্ত্র। ঘুরছে প্রকাশ্যে, মাঝে-মধ্যে গুলি বর্ষণও করছে তারা। টানা তিনদিন ধরে চলছে এ অবস্থা। যেন হঠাৎ রুপ পেয়েছে নরক রাজ্যে। ফলে চার-পাঁচটি পাড়ার মানুষ চরম আতংক ও ভীতির মধ্যে রয়েছে। জানমাল খোয়ানোর ভয়ে অস্ত্রধারীদের নামও মুখে নিচ্ছেনা স্থানীয় বাসিন্দারা।

unnamed-474

এ অবস্থা চলছে কক্সবাজারের পেকুয়ার সাগর ঘেষা উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামায়। তবে, সশস্ত্র মহড়া বা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হওয়ার ঘটনা নিয়ে কোন পক্ষই পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেনি।
মগনামার ফুলতলা, কাজির পাড়া, মুহুরী পাড়া, কাকপাড়াসহ আরো কয়েকটি পাড়ায় অর্ধশত ব্যক্তি দিচ্ছে অস্ত্রের মহড়া। এস.আলম কোম্পানীর কেনা কাকপাড়ার জমির ভোগ দখল নিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিদের মহড়া বলে একাধিক সুত্র জানায়। তবে, কেউই সশস্ত্র ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেননি।
স্থানীয় সূত্র মতে, ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য কাকপাড়ায় জমি ক্রয় করে এস.আলম কোম্পানী।

 

দীর্ঘদিন পূর্বে ক্রয় করা ওই জমি খাজনার বিনিময়ে দেখভাল করতো বিএনপি নেতা ও পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ। সম্প্রতি বেসরকারী কোম্পানীটি তার কাছ থেকে জমি বুঝিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমকে ওই জমি দেখভালের জন্য বলা হয়।

 

এতে দুই বিএনপি নেতা ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব-কলহ। জমির ভোগ-দখল নিয়ে দু’পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তাদেরই লোকজন সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজনের ধারনা।

 
স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, অর্ধ শতাধিক লোক সশস্ত্র মহড়া দেয়ায় চার-পাঁচটি পাড়ার নারী-পূরুষদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিজেদের উপর হামলার আশংকায় ভুগছে লোকজন।
মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আনাম এবং সহ-সভাপতি নাজেম উদ্দিন অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, মগনামা এখন নিয়ন্ত্রণ করছে অস্ত্রধারীরা। এই এলাকা নরক রাজ্যে পরিণত হয়েছে। দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে অর্ধশত ব্যক্তি। অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে এলাকায়। প্রশাসন তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক সদস্য বলেন, মূলত জমির ভোগদখল নিয়ে বিএনপি সমর্থিত লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে। এলাকার লোকজন একজন ব্যক্তিকে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখেছে। ওই অস্ত্র বৈধ না অবৈধ বলতে পারেনি।

 
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মগনামায় সশস্ত্র মহড়া দেয়ার ঘটনা শুনে এসআই কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র মহড়া বা গুলি বর্ষনের কোন তথ্য এলাকার লোকজন আমাকে জানায়নি।

 
মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, আমার এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত। আইন-শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজী মার্কেট এলাকায় একদল পুলিশ পরিদর্শন করে। এলাকারবাসীর বক্তব্য নিয়েছেন। আমি জেনেছি কোন ধরনের অনাকাংখিত ঘটনার তথ্য পুলিশ পাইনি। আমার সাথে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ এর সাথে কোন বিরোধ নেই। তার কাছ থেকে খাজনা বিনিময়ে জমি নিয়ে চাষ করছি আমি। কোন কিছু বললে তা প্রপাগান্ডা মাত্র।

 
এব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুইয়া বলেন, জমির বিরোধ নিয়ে মগনামায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির ঘটনা শুনেছি। তবে সশস্ত্র মহড়া বা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে কেউ বলেনি। থানায় পক্ষ বা বিপক্ষ লোকজন কোন অভিযোগও দেয়নি।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!