চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধে এক বছর ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পেল অবশেষে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের এই খবর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা।
তবে কমিটি অনুমোদনের কথা নিশ্চিত করলেও অনুমোদিত কমিটি মিডিয়ায় প্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে আতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কমিটির তালিকা মিডিয়ায় দেবো না। এক বছর আগে থেকেই এসব মিডিয়ায় আছে। নেতাদের কল করে জানিয়ে দেব আমরা।’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, একবছর আগে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে ৮ জন সিনিয়র নেতার করা অভিযোগের ভিত্তিতে যে কমিটির অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে, সেই কমিটিই অবিকল অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে দিনশেষে বিজয়ীর হাসি হাসলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতাই। তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অভিযোগ দেওয়া নেতাদের প্রাপ্তি এক্ষেত্রে কেবলই কমিটি অনুমোদনকে এক বছরের জন্য বিলম্বিত করা।
তবে নবগঠিত কমিটি নিয়ে সন্ধ্যা থেকে লুকোচুরির শেষ নেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা কর্মীদের। আতাউর রহমান মিডিয়ায় কমিটি প্রকাশে অনাগ্রহের কথা জানালেও অন্যরা কেউ ফোনই ধরছেন না। কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ফোনে দফায় দফায় কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এক বছর আগে জমা দেওয়া সেই কমিটিতে সহ সভাপতির পদে অধ্যাপক মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতী, মহিউদ্দিন রাশেদ, জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, এড ফখরুদ্দিন চৌধুরী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, মহিউদ্দিন বাবলু, নজরুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী, দপ্তর সম্পাদক নূর খান।
প্রসঙ্গত গত ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার পর একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ নেতার কার্যালয়ে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৮ নেতা। এ সময় কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মীয়করণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগ করেন তারা। জানান, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ উদ্ধারে এখানকার ‘সবচেয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগী’ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন এই কমিটি করা হয়েছে।
তাছাড়া রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকার পরও নেতাদের ব্যাবসায়িক পার্টনার, কর্মচারী, আত্মীয়সহ নানা বিবেচনায় অনেককে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সিনিয়র সেই ৮ নেতার সাক্ষাতের পরই আটকে যায় জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন। এর ঠিক এক বছরের মাথায় আটকে যাওয়া সেই কমিটি অনুমোদনের কথা জানালেন আতাউর রহমান আতা।
এআরটি/সিপি