নিষিদ্ধ, তবু চকবাজারের সড়ক দাপাচ্ছে টমটম

চট্টগ্রামের চকবাজারের সড়কে দাপিয়ে চলছে ব্যাটরিচালিত টমটম। এসবের কারণে সরু এই সড়কটিতে অসহনীয় যানজট ও নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার কাঁচাবাজার এলাকার ধুনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত কেবি আমান আলী সড়কে দৈনিক ১০০ অবৈধ টমটম চলাচল করে। ওই রাস্তায় টমটম চালাতে দিনে ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ওই টাকা তুলে আনতে তারা অতি দ্রুতগতিতে টমটম চালায়। ইতিমধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনায় শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, সড়কটি সরু হওয়ায় এমনিতেই যানজট থাকে। এর ওপর এসব টমটমের কারণে ধুনিরপুল এলাকা থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এর ফলে অফিসগামী মানুষসহ সড়কে চলাচলকারী সবাইকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সরেজমিনে দুপুর ১২টায় চকবাজার ধুনিরপুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধুনিরপুল ও নুর বিতানের সামনে যাত্রী বহনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ২০ থেকে ৩০টি টমটম। চকবাজারের কাঁচাবাজার, ধুনিরপুল ও ফুলতলার সড়কের আশপাশ দখল করে জটলা বেঁধে থাকে এ টমটমগুলো। যাত্রী ওঠানামার কারণে এই সড়কে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সরু সড়কের দুই পাশে টমটম পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামার কারণে এ সড়কে দিনরাত যানজট লেগে থাকে। টমটমগুলো যাত্রী নিয়ে মোড় ঘোরাতে গিয়েও ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

নিষিদ্ধ, তবু চকবাজারের সড়ক দাপাচ্ছে টমটম 1

জানা গেছে, ধুনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল এলাকায় দৈনিক ১০০টি টমটম নিয়মিত চলাচল করে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ২টা মর্নিং শিফটে ২০০ টাকা ও বিকেল ২ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারে না। এছাড়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য মাসিক এক হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাহেদুল ইসলাম, এসএম মুনির, মো. দেলোয়ার ও অভিক দাশগুপ্তের নেতৃত্বে দৈনিক এই চাঁদার টাকা তোলা হয়। লাইনম্যান রুবেল দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে এই চাঁদার টাকা তুলে তাদের জমা দেন। এসব টাকার ভাগ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও কতিপয় পুলিশের পকেটে যায়।

ব্যাটারিচালিত এই এ টমটমগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য সৈয়দ শাহ রোড, আতুরার দোকান এলাকায় একাধিক গ্যারেজ রয়েছে। এসব গ্যারেজে একটি নামমাত্র বৈধ সংযোগ থাকলেও বিকেল থেকে সেখানে চলে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে টমটমগুলোতে চার্জ দেওয়া হয়। আবার চার্জের জন্য দিতে হয় দৈনিক ১৩০ টাকা বিল। সৈয়দ শাহ রোডের সামাদের গ্যারেজে নিজস্ব ১৪টিসহ মোট দৈনিক ৪৮টি টমটম চার্জ দেওয়া হয়। টমটমগুলোর কারণে একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা ঘটছে তেমনি হচ্ছে বিদ্যুৎ অপচয়। স্থানীয়দের মতে এসব অবৈধ টমটম দ্রুত বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনা জরুরি।

সংগঠক জিকরুল হাবিবিল ওয়াহেদ বলেন, ধুনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল এলাকায় স্থানীয় মানুষ, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা অবৈধ টমটমগুলোর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এদের কারণে এই রোডে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই আছে। কেউ যেন দেখার নেই। টমটম চলাচল বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ৫টি সড়কে ক্লিনরোড ফ্রি রোড কর্মসূচি চালু করেছি। কর্মসূচির আওতায় সড়কগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদের ফলে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। আমরা নতুন করে রোডের তালিকা তৈরি করছি। শীঘ্রই নতুন তালিকার সড়কসহ ধুনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল সড়কের ওপর সব ধরনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!