ত্রিমুখী দখলে ইপিজেডের সড়ক, বেহাল রাস্তায় পথ চলা গাড়ির ফাঁকে

সড়কজুড়ে মালামালের স্তুপ জমিয়েছে ম্যাক্স গ্রুপ

চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে শিল্পকারখানা। ব্যস্ততম এ এলাকায় মূল সড়কের ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট ও কাঁচাবাজার। রাস্তা দখল করে থাকছে দূরপাল্লার গাড়ি সারি সারি পার্কিং। একই সঙ্গে পুরো রাস্তার মাঝখানে ভরে গেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ভারি মালামালসহ নির্মাণ সামগ্রীতে।

এমন নৈরাজ্যে বিস্ময়কর সরু হয়ে পড়েছে মূল সড়কের আকৃতি। উভয় পাশে ৫০ ফুটের রাস্তা ছোট হয়ে এখন ২৫ ফুটে নেমে এসেছে। বন্দরের ভারি যান চলাচল করায় এসব এলাকায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করাও রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সকালবেলা গার্মেন্টসে যাওয়ার সময় এবং বিকেল চারটার পর গার্মেন্টস ছুটির সময়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ওই এলাকার কর্মরত পোশাকশ্রমিক ও পথচারীরা।

এদিকে সম্প্রতি বর্ষার টানা বৃষ্টিতে সড়ক ভরে গেছে খানাখন্দ আর বড়বড় গর্তে। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকে যানজটের নরক যন্ত্রণা। এতে নাজেহাল হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইপিজেড থানা এলাকার প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের নির্মিত টিনের প্রাচীর। এসব প্রাচীরের ভেতরে কিছু অংশে রাখা হয়েছে তাদের মালামাল ও যানবাহনের পার্টসসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী।

ত্রিমুখী দখলে ইপিজেডের সড়ক, বেহাল রাস্তায় পথ চলা গাড়ির ফাঁকে 1

দেখা গেছে, প্রধান সড়কের ফুটপাত ঘেঁষে রয়েছে অবৈধ দোকানপাট ও কাঁচাবাজার। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে অবৈধভাবে। ওই সড়ক ঘিরে চতুর্মুখী অবৈধ কর্মকাণ্ডে সড়কে যান চলাচলসহ স্বাভাবিক জনপ্রবাহ বাধার মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। দেখা গেছে, সাধারণত দুপুরের পর থেকেই ওই সড়কে যানচলাচলে নেমে আসে অস্বাভাবিক ধীরগতি। সড়কের আকার সরু হয়ে পড়া এবং অব্যাহত যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সিইপিজেডের পোশাকশ্রমিক, পথচারীসহ পুরো এলাকাবাসীই।

সূত্রে জানা গেছে, ইপিজেডের ফুটপাতগুলো মূলত ভাসমান হকারদের দখলে। তাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়ে থাকে ইপিজেড থানা পুলিশ। এ কারণে অনেকটা বীরদর্পে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে চলেছেন হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে, ইপিজেড থানার এস আলম-বি আলম এবং নেভা হাসপাতাল এলাকায় রাস্তার এক পাশে দূরপাল্লার গাড়ির যে বিশাল পার্কিং বাণিজ্য, তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ। এছাড়া ওই রাস্তার মাঝখানের অংশ দখলে নিয়ে যত্রতত্র ভারি মালামাল ও নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ ফেলে রেখেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকের সভায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আফসানা আক্তার। সড়কে প্রতিদিনের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘অফিসের গাড়ি নেই। তাই প্রতিদিন ভোর সাড়ে ছয়টার বের হয়ে ইপিজেডের আকমল আলী রোড থেকে অফিস যাচ্ছি পায়ে হেঁটে। ওই সড়কের যেসব গাড়ি চলে তার চেয়ে আগে পৌঁছাতে পারি হেঁটে। ওই সময় সড়কে প্রচুর যানজট থাকে। একটু বৃষ্টি হলে হাঁটাও যায় না।’

ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি করেন জিয়াউর রহমান। সড়কের ভোগান্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার অফিস জুবলী রোড শাখায়। প্রতিদিন অফিসে যেতে স্বাভাবিক সময় লাগে মাত্র পৌনে এক ঘন্টা। সেখানে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই ঘন্টা বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে প্রতিদিন। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল আর ফ্লাইওভারের মালামালে অত্যন্ত সরু হয়ে পড়েছে পুরো সড়ক। সামান্য বৃষ্টি হলেই তীব্র যানজটে পড়ে ভোগান্তির শেষ থাকে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ইপিজেড থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘ম্যাক্সের কারণে পুরো সড়কে মালামালের স্তুপ জমে আছে। তাদের মালামালগুলো না সরানোর কারণে রাস্তায় জঞ্জাল জমে আছে। বন্দর ও আর ডিপোর গাড়ি কারণে পুরো সড়ক যানজটে ভরে যায়। তবে ফুটপাতে কাউকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্লাইওভারের কারণে রাস্তা ভাঙ্গা পড়ছে। এটা ম্যাক্স গ্রুপ ঠিক করবে।’

সড়কের অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের (বন্দর জোন) সহকারী কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার মাঝখানের জায়গা দূরপাল্লার গাড়ি পার্কিং করার জায়গা নয়। বিষয়টি সম্পর্কে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!