ট্রাকে চড়ে চট্টগ্রামের দুর্লভ বনরুই চলে গেল গাজীপুরে

অভিযানের মুখে পাচারকারীরা ফেলে গেল চটের বস্তার ভেতরে

গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে কিছু ফার্নিচার বানিয়ে ট্রাকে করে গিয়েছিলেন তার কালিয়াকৈরের বাড়িতে। কেউ টেরই পায়নি, চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া সেই ট্রাকে উঠে গিয়েছিল তিন ফুট লম্বা এক বনরুই। সেই ট্রাক গাজীপুরে পৌঁছার পর দুর্লভ এই প্রাণীটির হদিস পান ওই ব্যবসায়ী।

এতোদিন সেটি ওই ব্যবসায়ীর পরিত্যক্ত একটি ঘরে রেখে লালন-পালন করতে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি পাচারকারীরা বনরুইটির খবর পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গাজীপুরের ওই ব্যবসায়ীর ঘর থেকে তারা বনরুইটি নিয়ে যায়। এই খবর আবার পৌঁছে যায় বন বিভাগের বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে। টানা তিন দিন ধরে অভিযান চালিয়ে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সেই বনরুইটি তারা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনে বনরুইকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাণীটি এতোটাই হুমকির সম্মুখীন যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনরুইকে লাল তালিকায় স্থান দিয়েছে।

চটের বস্তার ভেতরে পাচারকারীরা ফেলে যায় ১২ কেজি ওজনের বনরুইটি।
চটের বস্তার ভেতরে পাচারকারীরা ফেলে যায় ১২ কেজি ওজনের বনরুইটি।

কালিয়াকৈর রেঞ্জের বন কর্মকর্তারা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের ডাকুরাই গ্রামের শাজাহান মিয়া চট্টগ্রাম থেকে কিছু ফার্নিচার আনার সময় ছোট একটি বনরুই ট্রাকে করে শাজাহানের বাড়িতে চলে আসে। কয়েক দিন আগে একটি পাচারকারী চক্র বনরুইটি শাজাহানের পরিত্যক্ত ঘর থেকে ধরে পাচার করে দেয়।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ-আস-সাদিক জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি, কালিয়াকৈর উপজেলায় একটি বনরুই ধরা পড়ার সেটি পাচারকারী চক্রের হাতে চলে গেছে। এ খবর জানার পর বনরুইটি উদ্ধারের জন্য বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি টিম তিনদিন ধরে ওই এলাকায় অভিযান চালায়। পরে ধরা পড়ার ভয়ে পাচারকারীরা বনরুইটি ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।’

জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার রেঞ্জ অফিসের সামনে একটি চটের বস্তার ভেতরে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে পাচারকারীদের ফেলে যাওয়া তিন ফুট লম্বা ও ১২ কেজি ওজনের বনরুইটি উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা বনরুইটি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হলে ওইদিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হয়। তবে এরই মধ্যে বনরুইটি আলো-বাতাস ও খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

বনরুই (Pangolin) আঁশযুক্ত একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী। পৃথিবীর ৮ প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে বাংলাদেশে তিনটির অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে কেবল ভারতীয় বনরুই (Indian Pangolin) ও চায়না বনরুই (Chinese Pangolin) পাওয়া যায়। এশীয় বৃহৎ বনরুই (Asian Giant Pangolin) নামে অপর একটি বনরুই চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পিঁপড়াভুক এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি বাংলাদেশে মহাবিপন্ন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় অল্পসংখ্যক বনরুই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!