সন্তানদের লেখাপড়ায় ঢাকার পরেই পুলিশের পছন্দ চট্টগ্রাম

আট শহরে হচ্ছে পুলিশের আধুনিক স্কুল

সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য পুলিশের বেশিরভাগ সদস্যই ঢাকার পরেই পছন্দ করেন চট্টগ্রামকে। অন্যদিকে সিলেট হচ্ছে তাদের সবচেয়ে অপছন্দের জায়গা। সারা দেশের প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চালানো এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ভালো স্কুলে সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য পুলিশ সদস্যরাও এই দুই জায়গায় থাকতে মরিয়া হয়ে থাকেন। বদলি হলেও অনেকে আবার ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে ফিরে আসার জন্য তদবির করেন। অনেকে বদলির আদেশ পাওয়ার পরপরই সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন।

সন্তানের লেখাপড়া-সংক্রান্ত জটিলতা থেকে বদলি নিয়ে তৈরি হওয়া এই বিড়ম্বনা দূর করতে আটটি বিভাগীয় শহরে আধুনিক মানসম্পন্ন রেসিডেন্সিয়াল (আবাসিক) প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর আশা করছে, সন্তানদের লেখাপড়ার জটিলতা নিরসন করা গেলে পুলিশ সদস্যদের মাঝে বদলি নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাগুলোও দূর হবে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের শিক্ষা শাখার পক্ষ থেকে সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ আটটি বিভাগীয় শহরে আধুনিক মানসম্পন্ন রেসিডেন্সিয়াল (আবাসিক) প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে সেখানে ৯০ শতাংশ পুলিশ সদস্য তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে আগ্রহী। জরিপেও অধিকাংশ পুলিশ সদস্য মতামত দিয়েছেন মানসম্মত আধুনিক স্কুল পেলে তাদের সন্তানদের বিভাগীয় শহরগুলোয় পড়াতে তাদের আপত্তি নেই।

বর্তমানে পুলিশ সদস্যদের পরিবারে শিক্ষার্থী আছে ৮২ হাজার ৯৮১ জন। জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী হতে পারে আরও ৫৩ হাজার ১৪৪ জন। সবমিলিয়ে সম্ভাব্য শিক্ষার্থী হতে পারে এক লাখ ৩৬ হাজার ১২৫ জন।

সারা দেশে দায়িত্বপালনকারী দুই লাখ ২ হাজার ৩২০ পুলিশ সদস্যের মধ্যে জরিপে অংশ নেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৩১৫ জন পুলিশ সদস্য। জরিপে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার এক লাখ ২৯ হাজার ৬১৭ জন অংশ নেন। এর বাইরে বাকিরা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা। এতে দেখা গেছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেই বেশি পছন্দ পুলিশ সদস্যদের। তাদের ২২ শতাংশ ঢাকায় এবং ২১ শতাংশ সদস্য সন্তানদের চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে চান। তাদের সবচেয়ে কম মাত্র ৪ শতাংশ পুলিশের পছন্দ সিলেট বিভাগ।

পুলিশ সদরদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের অনেক শহরে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় সন্তানের পড়ালেখার জন্য অনেক পুলিশ সদস্যকে ঢাকা বা চট্টগ্রামে পড়ে থাকতে যায় যে কোনো মূল্যে। অন্যত্র বদলি হলেও ফের ঢাকা বা চট্টগ্রামে আসার জন্য তাদের অনেকে তদবির করেন। অনেকে সন্তানের লেখাপড়ায় বিঘ্ন তৈরি হওয়ার কথা বলে বদলি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। সন্তানের কথা বিবেচনা করে ঢাকা বা চট্টগ্রামের বাইরে যেতে চান না। আবার অনেক পুলিশ সদস্য বদলি হয়ে অন্যত্র গেলেও পরিবারকে ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে রেখে যান।

পুলিশের উর্ধতন কমর্কর্তারা বলছেন, অনেক সময় ঘন ঘন বদলি হওয়ায় সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভালো স্কুল হলে এটা সার্বিকভাবে ওই এলাকার জন্য মঙ্গল। কারণ সেসব প্রতিষ্ঠানে শুধু পুলিশ পরিবারের সন্তানরাই পড়বে না। সাধারণ মানুষের সন্তানরাও পড়ার সুযোগ পাবে। অন্যান্য শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট অনুপাতে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে।

ভালো স্কুল পেলে ভর্তিতে আপত্তি নেই যাদের
পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে যারা সেখানে সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে এসপি থেকে তার ওপরের কর্মকর্তা রয়েছেন ৩৬০ জন (৭৯ শতাংশ), পরিদর্শক থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রয়েছেন চার হাজার ৮৫৬ জন (৮৩ শতাংশ)। অন্যদিকে কনস্টেবল থেকে এসআই রয়েছেন এক লাখ ১৭ হাজার ২০২ জন (৯০ শতাংশ) এবং সিভিল স্টাফ রয়েছেন এক হাজার ৯৫২ জন (৮১ শতাংশ)।

সন্তানকে যে মাধ্যমে পড়াতে চান পুলিশ সদস্যরা
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ৭৪ হাজার ৮৪ জন পুলিশ সদস্য তাদের সন্তানদের শিক্ষার মাধ্যম নিয়ে মতামত দিয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পুলিশ তাদের সন্তানদের বাংলা মাধ্যমে, ২৪ শতাংশ ইংরেজি মাধ্যমে, ৯ শতাংশ মাদ্রাসায় এবং এক শতাংশ ভোকেশনাল এডুকেশনে পড়াতে চান।

কোন্ বিভাগে কতোজন মতামত দিলেন
ঢাকা বিভাগ থেকে ৩৪, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৭, রংপুরে ৭, খুলনায় ১২, রাজশাহীতে ১১, বরিশালে ৭, ময়মনসিংহে ৬ এবং সিলেটে ৬ শতাংশ সদস্য মতামত দিয়েছেন। ইউনিটওয়ারী নমুনা সংগ্রহের দিক ঢাকা রেঞ্জ থেকে ৫২.৩, মহানগর পুলিশে ২৪.১, এপিবিএন ৫.৯, এসবি ৩.৩, হাইওয়ে পুলিশের ২.১, শিল্প পুলিশে ২, সিআইডিতে ১.৬, রেলওয়েতে ১.৫ এবং নৌপুলিশে ১.২ শতাংশ সদস্যের মতামত নেওয়া হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!