টাকা মেরে গায়েব রুপালি ব্যাংক ম্যানেজার, উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম’র বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ লাকী প্লাজার ব্যবসায়ী কাজী মো. নুর উদ্দিন। প্রায় ৪ বছর আগে তার প্রতিষ্ঠানের নামে জামানত দিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের সাগরিকা শাখা।

যেদিন ওই ঋণ ব্যবসায়ী তার অ্যাকাউন্টে ঢুকে, ওইদিনই সন্ধ্যায় গোপনে ৫ লাখ টাকা তুলে নেন ওই শাখার ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ ছিদ্দিকী। ব্যবসায়ীর সিসি লোন হওয়ায় প্রায় ঋণটি এক মাস পর্যন্ত ব্যাংকের রেখেছেন ওই ব্যবসায়ী। এই সুযোগ নিয়ে পরে বিভিন্ন ধাপে ধাপে বাকি ঋণের ২৫ লাখ টাকাও গোপনে তুলে নেওয়া হয়।

পরে ঋণের টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেখতে পান তার পুরো টাকাই তুলে নিয়েছেন ব্যবস্থাপক। সেটি জানতে গেলে, গ্রাহকের নিকট অকপটে দায় স্বীকারও করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। পরে আত্মসাৎ করা ওই টাকা দেওয়ার জন্য গ্রাহকের সঙ্গে লিখিত অঙ্গিকার করেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে ঘুরিয়ে টাকা না দেওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করেন গ্রাহক।

অভিযোগ রয়েছে, শাখার ব্যবস্থাপক নিজেই গ্রাহক নুর উদ্দিনকে দেওয়া ঋণের পুরো অর্থ তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে ওই গ্রাহককে ডেকে নিয়ে যান রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের ওআর নিজাম রোড চট্টগ্রামের জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. শাহজাহান চৌধুরী। প্রায় দুই বছর আগে বিষয়টি জানার পর আলোচনার করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ওই গ্রাহকের কাছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ দাবি করেন জিএম। গ্রাহকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ওই অনৈতিক প্রস্তাবের দফারফা না হওয়ায় সম্প্রতি গ্রাহকের ব্যাংকে রাখা বন্ধককৃত জমিটি নিলাম বিক্রি করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রুপালী ব্যাংক সাগরিকা শাখা।

গত ২৮ অক্টোবর গ্রাহক কাজী মো. নুর উদ্দিনের খতিয়ান নম্বর ২৮৩২ মূলে ১২২ দশমিক শূন্য শূন্য শতক নাল জমি বিষয়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রুপালী ব্যাংক লিমিটেড সাগরিকা শাখা।

এই বিষয়ে গ্রাহক নুর উদ্দিন বলেন, ‘জমির দলিল জামানত দিয়ে ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক লোন নিয়েছিলাম আমার প্রতিষ্ঠানের নামে। সেখানে ঋণের অর্থ তুলে নেওয়ার আগেই গোপনে আমার ঋণের পুরো টাকা বিভিন্ন ধাপে উঠিয়ে নেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। বিষয়টি জানতে পেরে ওই ব্যাংকের জিএম আমাকে ওনার অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আলাপ করার এক পর্যায়ে আমাকে বলেন, আপনার ঋণের পুরো অর্থ যেহেতু ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ সাহেব তুলে নিয়েছে, সেহেতু এই লোনের সমস্ত দায়-দায়িত্ব তিনিই নিবেন। এসব সমস্যা সমাধান করতে খরচ দিতে হবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। না হয়, নিলামে তুলে বিক্রি করে দেওয়া হবে বন্ধককৃত জমিটি।’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুর থানার আজিমপুর কাজী বাড়ির কাজী কামাল উদ্দিনের ছেলে।

২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি এসএমই চলতি মূলধন ঋণ মঞ্জুর করে রুপালী ব্যাংক লিমিটেডে চট্টগ্রামের সাগরিকা শাখা। নগরীর আগ্রাবাদ লাকী প্লাজায় মের্সাস ওড়না হাউজের নামে ৩০ লাখ টাকার এ ঋণ দেওয়া হয়। যেদিন ঋণ মঞ্জুর করা হয় ওইদিন থেকে ১ মাস সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে ঋণের পুরো অর্থ গোপনে তুলে নেয় ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। এই বিষয়টি গ্রাহক অভিযোগ তুললে সেটির দায় স্বীকার করেন ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করেন শামীম আহমেদ ছিদ্দিকী।

অভিযুক্ত শামীম আহমেদ ছিদ্দিকী (৪৩) চট্টগ্রামের চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডের আফতাব কনকর্ড টাওয়ারের ৪০৬ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ইয়ার আহম্মদ ভূঁইয়া। গত ৬ মাস আগে নানা অভিযোগের প্রক্ষিতে নগরীর জিইসি ও আর নিজাম রোড রুপালী ব্যাংক চট্টগ্রামের জোনাল অফিস থেকে বরখাস্ত করা হয়।

চলতি বছরে ১২ অক্টোবর প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন। ওইদিন আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশকে তদন্তের জন্য দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের সাগরিকা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিব না।’

গ্রাহকের ঋণের সমস্যা সমাধান করার প্রস্তাবে ঘুষ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের ওআর নিজাম রোড চট্টগ্রামের জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নুর উদ্দিন নামে একজন গ্রাহক ওই শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে সমস্যার কথা শুনেছি ঘটনার আরও অনেকদিন পর। ঘটনা যেহেতু তিন বছর আগের, সেখানে দুই বছর পর কেন জানালেন ওই গ্রাহক। তার উচিত ছিল বিষয়টি আগে জানানো। গত ৬ মাস আগে শামীম আহমেদ ছিদ্দিকীকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করেছে কর্তৃপক্ষ।’

আপনি বিষয়টি জানার পর গ্রাহককে অফিসে ডেকে সমস্যা সমাধান করতে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এই ধরণের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি কখনও বলব না এসব কথা।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!