জুতো ক্ষয় আর নয়, রেলের পেনশন যাচ্ছে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে

সত্তরোর্ধ দিদার হোসেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার। বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। প্রতিমাসে পেনশনের টাকা তুলতে তাকে যেতে হয় ২০ কিলোমিটার দূরে, চট্টগ্রাম শহরে। কারণ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ‘পে এন্ড ক্যাশ’ বিভাগ থেকেই মিলে তার পেনশনের টাকা। অবসরের পর ১০ বছর ধরে প্রতিমাসেই তাকে আসতে হয়েছে চট্টগ্রামে। কাগজ-কলমে জটিলতা হলে এ টাকা তুলতে মাসে কখনো দুই বারও আসতে হয় তার।

শুধু দিদার হোসেন নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার পেনশনভোগীকে টাকা তোলার এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। কারণ পূর্বাঞ্চলের নির্ধারিত ১২টি স্টেশন থেকেই তুলতে হয় পেনশনের টাকা।

তবে এখন থেকে রেলওয়ের কোন পেনশনভোগীকে টাকা তুলতে রেলস্টেশনে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পে এন্ড ক্যাশ অফিসেও ভিড় করতে হবে না তাদের। প্রতি মাসেই ভোগান্তির শিকার রেলওয়ের পেনশনভোগীদের টাকা এখন যাচ্ছে ব্যাংক একাউন্টে।

এতে কয়েক যুগ ধরে চলে আসা রেলওয়ের পেনশনভোগীদের এই ভোগান্তি কমেছে। অল্প টাকায় একাউন্ট খুলে দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে রেলওয়ে। ৩০০ টাকা জমা নিয়ে তাদের একাউন্ট খোলার সুযোগ দিতে সোনালী ব্যাংকের গভমেন্ট একাউন্টস এন্ড সার্ভিস ডিভিশনকে চিঠি দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী একাউন্ট খোলার পর তাতে গত ৩ মে থেকে চলে যাচ্ছে পেনশনভোগীদের টাকা। প্রথম দফায় ৫ হাজার পেনশনভোগীর একাউন্টে পৌঁছেছে টাকা।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। নির্ধারিত ১২টি রেলস্টেশনে প্রতিমাসে গিয়ে তারা সংগ্রহ করতেন পেনশনের টাকা। চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থানকারীরা ভিড় জমাতেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পে এন্ড ক্যাশ অফিসে। যুগের পর যুগ ধরে এভাবেই পেনশনের টাকা নিয়ে আসছেন তারা। স্টেশনগুলোর টিকিট বিক্রির টাকা থেকেই এসব টাকা পরিশোধ করা হতো পেনশনভোগীদের।

কিন্তু এ টাকা সংগ্রহ করতে বয়োবৃদ্ধ পেনশনভোগীদের ভোগান্তির সীমা ছিল না। কারণ প্রতিমাসেই নির্ধারিত স্টেশনে হাজির হতে হতো তাদের সশরীরে। কয়েক ঘণ্টা করতে হতো অপেক্ষা। কখনো কখনো ফিরেও যেতে হতো খালি হাতে। আসতে হতো দ্বিতীয়বার। আবার ‘বখশিস’ও গুণতে হতো কখনও ১০০, কখনো ২০০ টাকা!

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুরোধে গত ২৮ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের গভর্মেন্ট একাউন্টস এন্ড সার্ভিস ডিভিশন সারাদেশে ৩০০ টাকায় রেলওয়ের পেনশনভোগীদের একাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়। এরপর সকল পেনশনভোগী সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন। নিজ নিজ একাউন্ট নম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় হিসাব বিভাগে পাঠানোর পর সেসব একাউন্টে গত ৩ মে রেলওয়ের পেনশনভোগীদের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রায় ২৫ হাজার পেনশনভোগীর ভোগান্তি এই একটি সিদ্ধান্তেই লাঘব হয়ে গেল। তবে কাজটি বাস্তবায়ন অনেক কষ্টসাধ্য। করোনা পরিস্থিতিতে ছুটির মধ্যেও চিফ একাউন্টস অফিসার কামরুন্নাহার পেনশনভোগীদের ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে শুরু অর্থ সংস্থানের সকল কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করেছেন। তার আন্তরিকতার কারণেই মূলত কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজার এন্ড চিফ একাউন্টস অফিসার কামরুন্নাহার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের চেষ্টায় এবং মন্ত্রী মহোদয়, ডিজি, জিএম স্যারের আন্তরিকতায় পেনশনের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ কার্যক্রম সফলভাবে শুরু করেছি। পূর্বাঞ্চলের ২৫ হাজার পেনশনভোগীর মধ্যে আমরা ইত্যেমধ্যে ৫ হাজার পেনশনভোগীর একাউন্টে টাকা পাঠিয়েছি। বাকিদের টাকাও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে পেনশনভোগীদের ভোগান্তি কমে যাবে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!