চবি ছাত্রলীগ নেত্রী একসঙ্গে তিন পদে, চবি-চাঁদপুর ঘুরে কেন্দ্রও কব্জা

পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ-হতাশা ফেসবুকে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রলীগ নেত্রীর একের পর এক পদ পাওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ছাত্রলীগে এই নেত্রীর পদোন্নতি এতো দ্রুতগতিতে ঘটেছে যে, এতে অবাক হয়েছেন খোদ অনেক নেতাই। সর্বশেষ তিনি চবি-চাঁদপুর ঘুরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হয়েছেন।

অনেকটা রাতারাতি ছাত্রলীগের এতগুলো পদে আসীন হওয়া এই নেত্রীর নাম শামীমা সীমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তিনি। রাজনীতির মাঠে ‘নবীন’ এই ছাত্রলীগ কর্মীর একসঙ্গে এতো পদ পাওয়া নিয়ে চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই সমালোচনায় মেতেছেন ফেসবুকে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ মার্চ চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ সভাপতি মনোনীত হন শামীমা সীমা। এই পদ পাওয়ার ৪ মাসের মাথায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ দেওয়া হয় তাকে। এরপর একই তারিখের একটি চিঠিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয় শামীমা সীমাকে।

নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলেও শত শত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ভাগ্যে মেলেনি পদ নামক এই ‘সোনার হরিণ’। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা কিংবা মৌলবাদবিরোধী তৎপরতায় তার যদি কোনো বিশেষ অবদান থেকেও থাকে তবুও তাকে তিনটা ‘ভাইটাল’ পোস্ট দেওয়া যায়? আবার তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজনীতি করেন, তাহলে কিভাবে চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগে পদ পান কিভাবে? আবার চাঁদপুরে রাজনীতি করলে কিভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদ পেলেন?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী হতাশা নিয়ে বলেন, ২০১০ থেকে শিবিরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবনবাজি রেখে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে হলগুলোতে যারা কাজ করেছে, তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে পারেনি। তাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে চেয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি না করা কারও হাতে এই পদ দেওয়ার পর তারা আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে চান না।

ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের একসময়ের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল ফেসবুকে ক্ষোভ ঝেড়ে লিখেছেন, ‘আপনারা যারা দায়িত্ব নিয়ে প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগটাকে নিলামে তুলতেছেন মনে রাখবেন আপনারা একদিন প্রকৃতির নির্মম বিচারের সম্মুখীন হবেন। ধিক্কার জানাই আপনাদের এমন উন্মুক্ত নিলামের বিরুদ্ধে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে নিজের বাবা মা জানে না সন্তান কেন্দ্রীয় নেতা হয়েগেছে। এটা অন্যায়, এটা লজ্জার।’

শামীমা সীমার কেন্দ্রীয় নেত্রী হয়ে ওঠার খবরে খোদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগে কর্মী শূন্যতা দেখা দিয়েছে। পদ দেবার মত কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না।’

চবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাদী আহমেদও তার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ‘ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত চবি ছাত্রলীগ। একই দিনে একাধিক পোস্ট-পদবি নিজের নামে করে নেয়ার নজির চবি ছাত্রলীগে নাই। যুগে যুগে অনেক মাথা মোটা, বোকা সোকা লোক নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে শুন্য হাতে ফিরে গিয়েছে। হয়তো তাদের ত্যাগের ক্ষেত্র টা উপযুক্ত ছিল না, ভুল জায়গাতে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। সঠিক জায়গাতে নিজেকে উজার করে দিতে পারলে বিয়ে করে, ঘর সংসার সামলে, একাধিক ইউনিট সামলে কেন্দ্রকেও সামলানো যায়।’

শামীমা সীমাকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেন, ‘সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর পাওনা একাই আদায় করে নেয়ার সংগ্রামের অগ্রসেনানী, চবি ছাত্রলীগের সোনালী অর্জন, চবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী সদস্য ও সহ-সম্পাদক, একই সময়ে এই সকল পোস্ট নিজের নামে করে মহান নেত্রীর হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!