চবি ক্রিমিনোলজি বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অধ্যাদেশ না মানা, জোর করে স্বাক্ষর আদায় করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি অনুযায়ী বেশ কিছু আইন ভঙ্গের বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছেন বিভাগের সকল শিক্ষক। বিবৃতি বিভাগের তিন স্থায়ী শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন, মৌমিতা পাল ও প্রভাষক মো. মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ২০১৮ সালে চালু হয় ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ। প্রতিষ্ঠাকালে সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও তৎকালীন উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব নেন।

তিনি অবসরে যাওয়ার পর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২ জুলাই চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম নাজমুল ইসলাম খানকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ বিভাগের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তবে ২০১৮ সালের ১ জুলাই স্থায়ী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিভাগের দুই শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩-সংবিধি এর ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী- কোনো বিভাগের সভাপতি হওয়ার জন্য বিভাগের শিক্ষকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সর্বনিম্ন সহকারী অধ্যাপককে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

কিন্তু গত ৩০ মে এ বিভাগের স্থায়ী দুই শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও মৌমিতা পাল সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবিএম নাজমুল ইসলাম খানকে এ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়নি। এমনকি সভাপতি পদে সমাজতত্ত্ব বিভাগের এ অধ্যাপক কতদিন বহাল থাকবেন সেটিও জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিভাগের শিক্ষকরা জানান, গত ২৪ নভেম্বর বিভাগের বর্তমান সভাপতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর ৭৩-সংবিধির ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিভাগের শিক্ষকদের মধ্য থেকে সভাপতি নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগের সভাপতি চিঠি পাওয়ার ৭ কর্মদিবস পার হলেও রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠিটি পাঠাননি। এমনকি রেজিস্ট্রার দফতরেও এ চিঠির অগ্রীম অনুলিপি জমা দিতে গেলে তা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিভাগের শিক্ষকদের।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩৫তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত ০৭ অনুযায়ী “যে সকল নতুন বিভাগে সভাপতির পর কোন সহকারী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক নেই অথবা থাকলেও সভাপতির অনুপস্থিতিতে/ছুটিকালে তারাও ছুটিতে থাকেন, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনকে বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু গত ৫ ডিসেম্বর বিভাগের সভাপতি ছুটিতে যাওয়ার সময় এ নিয়ম ভঙ্গ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীকে বিভাগের সভাপতির “রুটিন দায়িত্ব” দিয়ে যান।

এদিকে গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির তৃতীয় সভা। নিয়মানুযায়ী বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভার ন্যূনতম তিন দিন আগে সভার আলোচ্যসূচি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের লিখিতভাবে জানাতে হয়। কিন্তু প্ল্যানিং কমিটির সভার দিনেই আলোচ্যসূচি প্রকাশ করে এ সভা ডাকা হয়। এছাড়া প্ল্যানিং কমিটির সভায় বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও বিভাগের সভাপতি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই মানসিক চাপ প্রয়োগ করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সদস্যদের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

শিক্ষকরা জানান, একজন অধ্যাপক ও চারজন সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদে স্থায়ী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়। কিন্তু বিভাগের কারিকুলাম অনুযায়ী নৃবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের শুধু একটি কোর্সের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি অযৌক্তিক। কারণ বিভাগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এ বিষয়গুলো অতিথি শিক্ষকদের মাধ্যমে পড়ানো হয়। এ নিয়ম অন্য বিভাগগুলোতেও অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

২৫ নভেম্বর প্ল্যানিং কমিটির তৃতীয় সভার সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন সভা ডেকে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিভাগের সভাপতিকে লিখিতভাবে জানান বিভাগের তিন শিক্ষক। পরে বিভাগের সভাপতি বুধবার (৮ ডিসেম্বর) প্ল্যানিং কমিটির চতুর্থ সভা ডাকলেও শিক্ষকদের লিখিত আবেদনের বিষয়টি প্ল্যানিং কমিটির আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি বিভাগের শিক্ষকদের।

এদিকে ৮ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত প্ল্যানিং কমিটির চতুর্থ সভায় গত ৮ নভেম্বর হওয়া প্ল্যানিং কমিটির তৃতীয় সভার সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদনের বিষয়ে প্ল্যানিং কমিটির কোনো সদস্য সম্মতি দেননি। পরে সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করার পরিবর্তে বিভাগের সভাপতি সভাটি স্থগিত করেন বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম নাজমুল ইসলাম খানের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিভাগের বর্তমান সভাপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যখন সকল শিক্ষক প্রভাষক ছিলেন। কিছুদিন আগে দুজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ওনি চলে যাওয়ার পরে নতুন সভাপতি বিভাগের দুই সহকারী অধ্যাপক থেকে দেয়া হবে।

চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের যদি জোরপূর্বক স্বাক্ষর করানো হতো, তাহলে তারা পরদিন কেন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ জমা দেননি? এতদিন পর কেন এসব বলছেন? তাদের এই দাবিটা একেবারেই বিধিবহির্ভূত।

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!