চবিতে ১০ কোটি টাকার সীমানাপ্রাচীর হেলায় শেষ হয়ে যাচ্ছে

ভাঙচুরের চক্র আবার তৎপর, নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিরোধিতাকারীরা ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীর ভাঙা ও প্রাচীরের গ্রিল খুলে ফেলছে। তবে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটার পরও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ বা ভাঙা প্রাচীন মেরামত করারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

সবশেষ গত দুইদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীপবন স্কুল সংলগ্ন সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. বদিউল আলমের বাড়ির সামনের সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উপাচার্যের অনুমতিক্রমে তা ভাঙা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধাপে ধাপে শাহজালাল হলের সামনের সীমানা প্রাচীরের অন্তত ১০টি গ্রিল খুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। আবার কোনো কোনো জায়গায় আংশিক খুলে ঝুলে রয়েছে প্রাচীরের গ্রিল। এর আগে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হল এবং বন ও পরিবেশ বিদ্যা ইনস্টিটিউটের পাশে কিছু অংশ ভেঙে তৈরি করা হয়েছে চলাচলের গেট।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীরের গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীরের গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে।

এদিকে সাবেক উপাচার্য বদিউল আলমকে সীমানা প্রাচীর ভাঙার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরাই। তারা বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সবকিছু যাচাই করে তার চলাচল বিকল্প রাস্তা আছে বলেই আগে প্রাচীরের জায়গায় রাস্তা বানাতে দেয়নি।

এছাড়া বিএনপিপন্থী এই সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বেশ অভিযোগ রয়েছে। এমন ব্যক্তিকে প্রাচীর ভেঙে রাস্তা বানানোর অনুমতি দেওয়া মানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। এর ফলে আরও অনেকে রাস্তা চেয়ে বসবে, তখন আর সীমানা প্রাচীরের মূল্যই কী থাকবে?

তবে এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে ধাপে ধাপে গ্রিল খুলে ফেললেও প্রশাসন তা বন্ধে বা মেরামত করতে কোন উদ্যোগ নেয়নি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অনেকটা বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি ফের অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-সম্পত্তি।

সম্প্রতি যে জায়গায় গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে তার অদূরে গত ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের পশ্চিম পাশের পাহাড়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা দামের বৈদ্যুতিক তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীরের গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীরের গ্রিল খুলে ফেলা হয়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫০ বছর পর ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে তা বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ওঠেপড়ে লাগে। কয়েক দফা সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনাও ঘটে। সবকিছু সামলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায় তৎকালীন প্রসাশন। নির্মাণকাজ ৬৫ ভাগ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মুখে গত বছরের ৭ জুলাই থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রিল খুলে ফেলার ঘটনাগুলো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটেছে। ১৯টি গ্রিল প্রকৌশল দপ্তর নিয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিরাপত্তা দপ্তর দেখে। ওনাদের জিজ্ঞেস করেন।’ সীমানা প্রাচীরের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অফিসে আসতে বলে কোনো তথ্য দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন করে তো কোনো সীমানা প্রাচীর ভাঙা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার্যকে তার চলাচলের রাস্তা করার জন্য প্রাচীর ভাঙার জন্য উপাচার্য তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে অনুমতি দিয়েছেন। গত প্রশাসনের সময়ে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

গ্রিল খুলে ফেলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো দেখতে হবে কারা খুলছে। আমি খবর নেবো।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কল কেটে দিয়েছেন।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!