চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনসার পেটালো ছাত্রলীগ, ‘স্যরি’ বলে ঘটনা শেষ! (ভিডিও)

‘কী করবো আর ভাই? ওদের পাওয়ার। ওরাই মারবে’

প্রতিদিনের মতো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গোলচত্বরে দায়িত্ব পালন করছিলেন আনসার সদস্য মো. খোকন মিয়া। এমন সময় একটি মোটরসাইকেলে এসে মেডিকেল কলেজের দুই ছাত্রলীগকর্মী গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করতে গেলে বাধা দেন খোকন। এই সময় তিনি ‘আপনাদের জন্য নির্ধারিত পার্কিং জোন আছে, সেখানে রাখুন’ বলে জানান দু’জনকে। এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনসার সদস্যের ওপর হামলা করেন দুই ছাত্রলীগকর্মী। মারতে থাকেন উপর্যপুরি কিল-ঘুষি। এই কাজে দু’জনের সঙ্গে যোগ দেন অপর এক ছাত্রলীগকর্মী।

এই ঘটনা বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরের। যদিও এটি জানাজানি হয় দু’দিন পর। এর মধ্যেই ঘটনার পরেরদিন হাসপাতালের পরিচালকের রুমে অভিযুক্ত তিনজনকে ডেকে পাঠিয়ে সেই আনসার সদস্যকে ‘সরি’ বলে মীমাংসা করা হয় ঘটনা।

অভিযুক্ত তিন ছাত্রলীগকর্মী হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল বর্ষের ছাত্র কায়েস মাহমুদ, বিডিএস ফাইনাল বর্ষের মো. জুনায়েদ ও ইন্টার্ন ডাক্তার শাহরিয়ার মোহাম্মদ রাহাতুল ইসলাম।

আনসার সদস্যকে মারধরের একটি সিসিটিভি ফুটেজও এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে।

দুই মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা গেছে, মেডিকেলের গোলচত্বরের প্রধান ফটকের সামনে দুই মোটরসাইকেল আরোহী এসে গাড়িটি রাখার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ইন্টার্ন ডাক্তার শাহরিয়ার ও পেছনে ছিলেন জুনায়েদ। মেডিকেলের ব্যস্ততম এই গেটে মোটরসাইকেলটি যখন রাখা হচ্ছিল, তখন আনসার সদস্য খোকন মিয়া হাতের ইশারায় গাড়ি না রাখতে বলেন। এই সময় গাড়িতে বসে থেকেই খোকন মিয়ার সঙ্গে তর্কে জড়ান দুই ছাত্রলীগকর্মী।

প্রায় ৩০ সেকেন্ড বাকবিতণ্ডার পর গাড়ির পেছনের সিট থেকে নেমে খোকন মিয়ার বুকে ধাক্কা দেন জুনায়েদ। এরপর শাহরিয়ার ও কায়েসসহ এসে ঘিরে ধরেন খোকন মিয়াকে। খোকন মিয়া পকেট থেকে ফোন বের করতে চাইলেই ঘুষি মারা শুরু করেন জুনায়েদ ও শাহরিয়ার, এরপর মারামারিতে যোগ দেন কায়েসও।

পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষজন খোকন মিয়াকে আড়াল করতে চাইলেও খোকন মিয়ার ইউনিফর্মের কলার ধরে রাখেন কায়েস। তখন অনবরত ঘুষি মারতে থাকেন জুনায়েদ। প্রায় দুই মিনিট পর উপস্থিত মানুষদের সহযোগিতায় তিনজনের হাত থেকে রক্ষা করা হয় আনসার সদস্য খোকন মিয়াকে।

ঘটনাটি কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি বলে জানান অভিযুক্ত ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রাহাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আনসার সদস্যই ধাক্কা দিতে আসছিল। মারমুখি আচরণ করছিল। পরে বুঝেন তো, পোলাপাইন যা করে তাই করছে।’

শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার পরও দুই মিনিটের জন্য রাস্তায় পার্কিং করতে দেননি সেই আনসার সদস্য। এমনকি অশোভন আচরণ করেছে।’

ডাক্তারদের জন্য আলাদা পার্কিং আছে কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পার্কিং একটা হয়েছে। তবে সেটা তেমনভাবে প্রচলিত না, ওটা খুব রিসেন্টলি হয়েছে। কিন্তু আমরা তো দুই মিনিট পরেই চলে যেতাম।’

এদিকে ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন ‘সরি’ বলে দায় সারলেও ক্ষোভ ঝেরে দায়িত্বরত আরেক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কি করবো আর ভাই? ওদের পাওয়ার, ওরাই মারবে আবার সরি বলে ঘটনা শেষও করে দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমাদের সিনিয়র স্যাররা এসে পরিচালক স্যারের রুমে ঘটনার বিষয়ে মিটিং করেছে। তখন তিনজনকে ডেকে এনে খোকন মিয়াকে ‘সরি’ বলানো হয়। আর ভবিষ্যতে এমন হবেনা বলেও কথা নেওয়া হয়।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!