চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের অবাক ‘অভিনন্দন’, সমালোচনার ঝড়

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের বিভাগভিত্তিক কমিটি ঘোষণার পর তাদের ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা তিনটি অভিনন্দনপত্রের ভাষা প্রায় অভিন্ন। তিন অভিনন্দনপত্রেই স্বাক্ষর রয়েছে অর্থনীতি, ইতিহাস এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের অবাক ‘অভিনন্দন’, সমালোচনার ঝড় 1

রীতিমতো চিঠি লিখে শিক্ষকদের এমন অভিনন্দন প্রকাশের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের অবাক ‘অভিনন্দন’, সমালোচনার ঝড় 2

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ শিক্ষকদের তিনটি অভিনন্দনপত্রই তার নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করেছেন।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) চট্টগ্রাম কলেজ ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আবু তাহের ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক অভিনন্দনপত্রে লেখা হয়— ‘চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ কর্তৃক অনুমোদিত ইতিহাস বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়সাল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস উদ্দিনকে মনোনীত করায় ইতিহাস বিভাগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

একই দিন চট্টগ্রাম কলেজ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্বাক্ষরিত এক অভিনন্দনপত্রে লেখা হয়— ‘চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ কর্তৃক অনুমোদিত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দু রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান আয়াতকে মনোনীত করায় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

কলেজের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হলেন ছোলজার রহমান।

একইভাবে চট্টগ্রাম কলেজ অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্বাক্ষরিত এক অভিনন্দনপত্রে লেখা হয়— ‘চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ মাহমুদ-সবুজ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত অর্থনীতি বিভাগে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দেলোয়ার হোসেন দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক আবু মেশকাতকে মনোনীত করায় অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

কলেজের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, এই বিভাগের প্রধান হলেন প্রফেসর মোহাং ইমাম ছাদেক।

শনিবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের স্বাক্ষরে কলেজে বিভাগভিত্তিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার ৫ বছর পর নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৩০ জনকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম কলেজের ১৮টি বিভাগের মধ্যে ৯টি বিভাগে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসব বিভাগ হচ্ছে— ইংরেজি, অর্থনীতি, ডিগ্রি, সমাজবিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও ইতিহাস।

এদিকে শিক্ষকদের এমন অভিনন্দন প্রকাশের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। রশিদুল ইসলাম নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এরা শিক্ষক হইছে কেমনে? কার পায়ে তেল মালিশ করে? এরা ক্যাডার তো দূরের কথা, এদের তো রিক্সা চালানোর মত যোগ্যতা নাই।’

ফারুক খান নামের অপর একজন লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ কি কোন নির্দিষ্ট সংগঠনের হাতে পরিচালিত? চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী নির্দিষ্ট কোনো দলের? চট্টগ্রাম কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলীয়করণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সাইফুল করিম নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই বলে— ‘সকল স্যারদের ছাত্রলীগের পতাকা তলে আসার আহবান জানাই। চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, চিন্তা চেতনা আপনাদের সাথে যায় না। সবকিছুকে দলীয়করণ করলেন। আপনাদের থেকে ছাত্ররা শিখবেটা কি? আপনারা গুটিকয়েক ছাত্রলীগের অভিভাবক, না ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক? আপনাদের এই কর্মকান্ডের কারণে ছাত্ররা কি আপনাদের সম্মান করবে বলে মনে করেন? বিবেক কী বলে?’

সরফরাস নূরী নামের অপর একজন লিখেছেন, ‘সরকারি কলেজ প্যাডে কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দদের অভিনন্দন দেয়া অযৌক্তিক। কতটা অযৌক্তিক বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা কি সরকারি কলেজ নাকি দলীয় কলেজ বুঝলাম না। স্যারদের আরো নীতিবান হওয়া উচিত। চট্টগ্রাম কলেজ ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ। এতোটা দলীয়করণ আপনাদের কাছ থেকে জাতি আশা করে না।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!