চট্টগ্রামে শিশু আয়াতকে অপহরণের পর ভয়ে খুন, ৬ টুকরো করা হয় লাশ

আদালতে পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র

তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় আয়াতকে জিম্মি রেখে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন আবীর আলী। কিন্তু আয়াতকে মুক্ত করে দিলে ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে খুন করেন তিনি। খুনের পর ৫ বছরের শিশু আয়াতের লাশ করা হয় ৬ টুকরো।

১১ মাস আগে চট্টগ্রামে শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে ৬ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রোববার (৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র ও দোষীপত্র দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে জানান, অভিযোগপত্রে ওই শিশুকে অপহরণের পর তার দাদার কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবির পর নির্মমভাবে খুন করা তরুণ আবীর আলীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তাকে সহযোগিতা করায় এক কিশোরকে অভিযুক্ত করে আলাদাভাবে আদালতে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার ধার্য তারিখে সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।

তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তরুণের বাবা-মা ও বোনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অভিযোগপত্রে তিনি সুপারিশ করেছেন বলেও জানান তিনি।

২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় ৫ বছরের আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এই ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।

এই ঘটনায় ২৪ নভেম্বর আবির আলী নামে এক তরুণকে আটক করে পিবিআই জানায়, প্রতিবেশি এই তরুণ আয়াতকে অপহরণ করেছিল। এরপর তাকে শ্বাসরোধে খুন করে ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।

আবিরের দেওয়া তথ্যে ৩০ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে নালা সংলগ্ন স্লুইসগেট এলাকা থেকে আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

গ্রেপ্তার আবির আলী (১৯) নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আজাহার আলীর ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। আবিরের বাবা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেটির মালিক আয়াতের দাদা মনজুর হোসেন।

এই ঘটনায় ইপিজেড থানায় সোহেল রানার দায়ের করা মামলা প্রায় ১১ মাস তদন্তের পর দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিষয়ে পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে জানান, ‘আবীর আলী হতাশাগ্রস্ত তরুণ। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়। দ্রুত ধনী হওয়ার নেশাও ছিল তার। এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী এক কিশোরকে নিয়ে আয়াতকে অপহরণ করে।’

তিনি আরও জানান, ‘তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় আয়াতকে জিম্মি রেখে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল সে। কিন্তু আয়াতকে মুক্ত করে দিলে ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার ভয়ে তাকে খুন করে।’

পিবিআই জানিয়েছে, খুন ও লাশ গুমের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় দাখিল করা আবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে ছয়জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ঘটনার পর আবীরের বাবা আজাহার আলী, মা আলিমনা আলো এবং তার কিশোরী বোনকেও গ্রেপ্তার করেছিল। তবে তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের পর আবীর আলীর দেওয়া তথ্যে পিবিআই তার ঘনিষ্ঠ ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে ৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করেছিল। ওই কিশোর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকায় আয়াতের বাসার অদূরে ‘ভাই ভাই হোটেল’র মেসিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই এলাকার সাইফুল কলোনিতে ব্যাচেলর বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন।

গত ৭ ডিসেম্বর ওই কিশোর আদালতে জবানবন্দি দিয়ে আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে অবগত থাকার কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, মানুষ সন্দেহ করবে—এই ভয়ে আয়াতকে মেরে ফেলার বিষয়টি জানার পরও তিনি কাউকে কিছু জানাননি। এরপর থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি নিজের মতো করে স্বাভাবিক থাকেন।

পিবিআই জানায়, দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় কিশোরকে অভিযুক্ত করে আদালতে পৃথক দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। কিশোর বয়সী হওয়ায় তার বিচার পৃথক আদালতে চলবে।

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!