চট্টগ্রামে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আরএনবির হাবিলদার

রেলওয়েতে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় কোটি টাকা। এই টাকা চাইতে গেলেই পাওনাদারদের দেখান ভয়ভীতি। সেন্ট্রাল রেলওয়ে ভবনে (সিআরবি) চাকরির সুবাদে আশপাশের দোকান থেকে নেন চাঁদা, মোটা অংকের টাকা নিয়ে বসান দোকানও। চাঁদাবাজির কারণে তাকে বদলি করা হলেও কমেনি তার দুর্নীতি।

তিনি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হাবিলদার রকিবুল হাসান তালুকদার। তার বিরুদ্ধে চাকরির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) দপ্তরে অভিযোগও জমা পড়েছে।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে হাবিলদার হিসেবে আরএনবিতে যোগ দেন রকিবুল হাসান তালুকদার। চাকরিতে যোগ দেওয়ার কয়েক বছর পর তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পাহাড়তলীর স্টোরে দায়িত্বে থাকার সময় এক চোরকে আর্থিক সুবিধার নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্লোজড হন। পরে সিআরবিতে আসলে সেখানে আশপাশের দোকান, কার পার্কিং ও হকার থেকে দৈনিক ও মাসিক চাঁদা আদায় শুরু করেন তিনি। এরপর সাবেক জিএম মো. জাহাঙ্গীর আলমের বাংলোর আশপাশের আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছ বিক্রির দায়ে তাকে আবারও ক্লোজড করে সংকেত বিভাগে বদলি করা হয়।

সংকেত বিভাগে যোগ দিয়ে আরও বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন রকিবুল। সাবেক জিএমের আত্মীয়, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলামের এলাকার লোক এবং বন্ধু পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন লোক থেকে তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর চাকরি দিতে না পারলে ভুক্তভোগীরা তার কাছ থেকে টাকা চাইতে থাকেন।

এছাড়া টাকা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। এমনকি আনিসুর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।

আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর নাটোর জেলার নলডঙ্গা থানার মির্জাপুর দিঘা গ্রামের আনিসুর রহমানের ভাতিজাকে খালাসি পদে চাকরি দেওয়ার নামে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন রকিবুল। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ১৪ লাখ টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের পৃথক পৃথক টাকা অংক উল্লেখ করে মোট ১৪ লাখ টাকার চেক দেন রকিবুল। চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানান বাহনা শুরু করেন তিনি। পরে ভুক্তভোগীরা টাকার জন্য চাপ দিলে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিও দেখানো শুরু করেন।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফিরিঙ্গীবাজার এলাকার দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির ছেলেকে ওয়েম্যান পদে চাকরি দেওয়ার নামে ৫ লাখ টাকা ও দীপু চাকমার এক আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার নামে ২ লাখ টাকা নেন রকিবুল। দীর্ঘ ৮ মাস পাওনা টাকার জন্য রকিবুলের পেছনে ঘুরে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন তারা। একইসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রকিবুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘এসব বিষয়ে বলতে গেলে অনেক কথা। আপনার অফিসে এসে দেখা করে সামনাসামনি বসে বলবো।’ এরপর তাকে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএনবির ভারপ্রাপ্ত চিফ কমান্ড্যান্ট মো. রেজোয়ানুর রহমান বলেন, ‘চাকরি দেওয়ার নামে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অনৈতিক। যদি এমন হয়, ভুক্তভোগীরা চাইলে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!