চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশার অত্যাচার, চালকের আসন নিয়ে চালাকি

দুর্ঘটনা প্রতিদিনই, সব জেনেও পুলিশ নিরব

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ও বাকলিয়ায় বেড়েছে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম্য। ব্যাটারিচালিত রিকশা, নিবন্ধনহীন ম্যাক্সিমা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে। অবৈধ থ্রি হুইলার ইজিবাইক চিহ্নিত ও অপসারণ করতে নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে বিভিন্ন অলিগলিতে চলছে এসব রিকশা। আর এসব অটোরিকশায় প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কেউ না কেউ। একইসঙ্গে রিকশার জন্য বিদ্যুতের যোগানও দেওয়া হচ্ছে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। এর ফলে বিদ্যুতের বড় একটি অংশ গচ্চা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশার অত্যাচার, চালকের আসন নিয়ে চালাকি 1

এদিকে অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে ট্রাফিক পুলিশ মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও একেবারেই নিরব থানা পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযানে অবৈধ রিকশা জব্দ করা হলেও টাকার বিনিময়ে পুনরায় ছেড়ে দেওয়া হয়। নতুন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আসার পর থেকে বেড়েছে অবৈধ গাড়ির সংখ্যাও।

কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের দাবি, জব্দ করা গাড়ি আদালতে পাঠানোর পর জরিমানা দিয়ে আবারও রাস্তায় নামে। যার ফলে সড়কে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।

চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে বেপরোয়া গতিতে। এসব রিকশা চালকদের অধিকাংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে ব্যাটারি রিকশা গভীর রাতে চলতো। তাও ছিল সংখ্যায় খুব কম। এখন দিনদুপুরে অবাধে গাড়িগুলো চললেও প্রশাসনের নজরদারি নেই। দু’মাস ধরে অবৈধ গাড়ির চলাচল বেড়েছে।

জানা গেছে, চকবাজার ধুনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল, সৈয়দ শাহ রোড়, নতুন এক্সেস রোড়, দেওয়ানবাজার, দিদার মার্কেট, বগারবিল এলাকা বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। টোকেনের মাধ্যমে চলে এসব অবৈধ গাড়ি। অবৈধ গাড়িগুলোতে বিশেষ টোকেনও লাগিয়ে রাখা হয়। এসব এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন বগারবিলের বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন নামের একজন। তিনি স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির অনুসারী বলে নিজেকে পরিচয় দেন। তার নামে চকবাজার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার মামলাও রয়েছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুর্ঘটনার শিকার কলেজ ছাত্র আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘চকবাজার থেকে হেঁটে রাহাত্তারপুলের বাসায় যাচ্ছিলাম। মাঝপথে অটোরিকশার ধাক্কায় হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। এই সড়কে প্রায় সময় এমন ঘটনা ঘটে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. দেলোয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

চকবাজারের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বিপ্লব কুমার পাল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। গতকালও ছয়টি গাড়ি জব্দ করেছি। মূল সড়কে আসলেই অবৈধ গাড়ি জব্দ করা হয়। কিন্তু অলিগলিতে নজরদারির সুযোগ কম। এসব গাড়ির তালিকা, কোন গ্যারেজে চার্জ দেওয়া হয়—এসব তথ্য থানা পুলিশকে দেওয়া আছে। থানা পুলিশ অভিযান চালালে গাড়ির সংখ্যা কমবে। থানা পুলিশ যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, আমরা সহযোগিতা করব।’

অবৈধ গাড়ি জব্দের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জব্দ করার পর গাড়ি আদালতে চালান করি। এরপর আদালতে জরিমানা দিয়ে তারা আবারও রাস্তায় নামে।’

এই বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, ‘অবৈধ গাড়ি বন্ধে আমরা সবসময় অভিযান পরিচালনা করি। অবৈধ গাড়ি চালাতে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!