চবির রুবেল বারবার বিতর্কে, নেপথ্যে কি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব?

‘আমি তো ক্যাম্পাসে যাবোই, আমি যেহেতু সভাপতি, তাই আমি ক্যাম্পাসে গিয়ে দায়িত্ব পালন করবো। ওরা কী করলো, না করলো- আমার দেখার বিষয় না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিপথগামী ছেলে নিয়মিত ছবি ও অডিও এডিট করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে’— এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়লেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশের কাছ থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষিত সংগঠনের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।

বুধবার (৭ জুন) মধ্যরাতে একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে সভাপতি রুবেল নিজের গ্রুপেরই এক নেতাকে মার খাওয়ানোর বিষয় স্বীকার করে নেন। সেই অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, রুবেল তার এক কর্মীকে বলছেন— ‘রমজাইন্নারে মারতে হইছে আমার? আমারে চিটাং ভার্সিটির সবাই ভয় পায়। তুই শুধু পাশে থাক, বাকি কাজ অটো হয়ে যাবে।’

এই রেকর্ডই কাল হয়ে দাঁড়ালো রুবেলের জন্য। রেকর্ড ফাঁসের পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে চবির শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর রুম ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। রুমটিতে থাকেন রুবেল। এছাড়াও রুবেলের ‘গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’ স্লোগান দিয়ে তাকে চবি ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।

এর আগে নারীঘটিত বিষয়, কর্মীদের দিয়ে পা টেপানো বা উলঙ্গ ছবিতে বিতর্কের বিষয়বস্তু হন এই বয়স্ক ছাত্রনেতা। যদিও তিনি প্রতিবার দাবি করেন ছবিগুলো ‘এডিট’ করা এবং এই অডিওটিও ‘সুপার এডিট’ বলে জানান তিনি।

এই কাজের পেছনে রুবেল নিজ গ্রুপ ‘সিএফসি’র নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান ও ‘সিক্সটি নাইন’ গ্রুপের সাইফকে দায়ী করেছেন।

এই বিষয়ে রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘সিএফসির ১০-১২ জন ছেলেকে আর্থিক যোগান দিয়ে সহযোগিতা করছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। তার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই কাজগুলো করা হচ্ছে।’ যদিও সেই সাবেক নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

রুবেল না জানালেও চবির একাধিক নেতা জানান, চবির সাবেক নেতা ও বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যক্তিগত সহকারী অমিত কুমার বসুর সঙ্গে কমিটি বিষয়ক মতবিরোধ রয়েছে রুবেলের। ধারণা করা হয়ে থাকে, চবিতে ছাত্রলীগের রাজনীতির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অমিত বসুর।

তবে অপর একটি পক্ষ বলছে, অমিত কুমার বসু এখানে কোনো ফ্যাক্টর নন, মূল সমস্যা চবি ছাত্রলীগের বর্ধিত কমিটি নিয়ে। মূলত যে কয়েকজন কর্মী রুবেলকে রাজনৈতিকভাবে ভোগাচ্ছেন, তাদের একজন সিএফসির বর্তমান কর্ণধার চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেও এই সাদাফ ছিলেন রুবেলের বিশ্বস্ত কর্মী।

তাদের দাবি, সাদাফকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেন রুবেল। সাদাফ ও তার অনুসারীদের ইচ্ছে ছিল তিনি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হবেন। কিন্তু রুবেল টেকনিক্যালি সাদাফকে বানিয়েছেন সহ-সভাপতি। আর সেই থেকে শুরু সাদাফ-রুবেলের সম্পর্কের ‘ব্রেকআপ’।

অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পরও রুবেল ক্যাম্পাসে আসবেন—এমন তথ্যের উত্তরে সিএফসি গ্রুপের নেতা সাদাফ বলেন, ‘যে লোককে ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উনিই উল্টো ছাত্রদের লাঞ্ছিত করছেন, মার খাওয়াচ্ছেন, তাই ছাত্রদের নেতা থাকার কোনো অধিকার ওনার নেই। এজন্য ওনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও যদি উনি আসেন, বিক্ষুব্ধ নেতারা কখনও ওনাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেবে না।’

এদিকে রেকর্ডিংটি সুপার এডিট করা—রুবেলের এমন দাবি উড়িয়ে দিয়ে সাদাফ বলেন, ‘এডিট আছে জানি, সুপার এডিট কী? উনি প্রতিবার এই সুপার এডিট কোত্থেকে খুঁজে পান জানি না। আর দুনিয়ায় এত নেতা থাকতে ওনাকেই কেন সবাই এডিট করে বিতর্কিত করবে? উনি কী হয়েছেন এমন?’

তিনি আরও বলেন, ‘রুবেল কখনও ক্যাস্পাসে ঢুকতে পারবে না। কারণ তিনি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। ওনার কোনো কর্মী নেই। আমিও ওনার কর্মী ছিলাম, যাকে মারা হয়েছে তিনিও তার কর্মী। এর আগে তো নাছিরপন্থী গ্রুপ ‘সিক্সটি নাইন’ ও ‘বিজয়’ তাকে বাদ দিয়েছে। এবার তার নিজের গ্রুপ সিএফসিই বাদ দিলো।’

তবে রুবেলের দাবি, ‘হাতেগোনা ১০-১২ জন আছে বিপথে। বাকিরা সবাই আমার পক্ষে।’

এর আগে গত ১ জুন চবির বগিভিত্তিক দুই গ্রুপ সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতাদের কিরিচের আঘাতে গুরুতর আহত হন রুবেলের কর্মী ও চবি ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক রমজান হোসাইন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!