চট্টগ্রামে বাড়ছে শিশুদের ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ, গুলিয়ে যাচ্ছে চিকেন পক্সে

অ্যান্টিবায়োটিকে শিশুর বিপদ

চট্টগ্রামে শিশুদের ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ বাড়ছে। তবে এটিতে জলবসন্তের ((চিকেন পক্স) সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে। ফলে খাওয়াচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক, যা শিশুদের কাবু করেছে আরও বেশি। অথচ শুধুমাত্র নিয়ম মেনে চললে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই সেরে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১৫-২০ জন শিশু রোগী আসছে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে। মূলত ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় এক শিশু থেকে এই রোগ দ্রুত আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় এটি।

ডাক্তাররা বলছেন, এই ছোঁয়াচে রোগ শিশুর সঙ্গে সঙ্গে বড়দেরও হতে পারে। এটির সঙ্গে জলবসন্ত রোগের মিল রয়েছে। অনেক অভিভাবক এটি নিয়ে বিভ্রান্ত হন। তাই লক্ষণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়েটিক না খাইয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নগরের জিইসি এলাকার বাসিন্দা দেড় বছর বয়সী শিশু দাউদের শরীরের কয়েকদিন ধরে ফুসকুড়ি দেখতে পান মা রত্না বেগম। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন জলবসন্ত, কিন্তু পরে দেখে এসব ফুসকুড়ি বেড়ে গেছে। বাড়ির পাশের এক এমবিবিএস ডাক্তারকে দেখালে তিনি প্রথমে এটিকে চিকেন পক্স উল্লেখ করে কিছু ওষুধ দেন। এক সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার পর শিশুর জ্বর ও কাশি দেখা দেয়।

পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু বহির্বিভাগে দেখালে ডাক্তার জানান, এটি আসলে ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ’।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন শিশু রোগী আসছে। মূলত হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে হাত, পা, মুখ ও জিহ্বায় গোটা দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু রোগ বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ এবং জলবসন্ত দুটোই ভাইরাসজনিত অসুখ। দুটোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে গলা ব্যথা, জ্বর এবং খাবারে অরুচি থাকে। এর কয়েকদিন পর মুখ ও জিহ্বায় পুঁজযুক্ত ঘায়ের মত ফুসকুড়ি হয়। যাতে ব্যথা হতে পারে, খেতে কষ্ট হতে পারে। এই অসুখে হাতে এবং পায়ে ত্বকের রঙ অনুযায়ী গোলাপি, লাল অথবা কাল রঙের উঁচু গোটা দেখা দেয়। পরে তা পানিযুক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ সময় হাত, পা এবং জিহ্বাতেই ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তবে উরু অথবা নিতম্বেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে।’

ডা. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কক্সেকি নামের এক ধরনের ভাইরাসের কারণে মূলত এ রোগ হয়। এতে আক্রান্ত শিশুর নাকের পানি, লালা, ফোসকা ফাটা পানি, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এমনকি আক্রান্ত শিশুর পায়খানার মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশের চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন শিশুকে হসপিটালাইজড করা লাগতে পারে।’

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, ‘এ রোগে বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই বা তার দরকারও নেই। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। স্বাভাবিক পরিচর্যা, খাবার, বিশেষ করে পানি বা পানীয় পর্যাপ্ত দিতে হবে, যাতে প্রস্রাব ঠিকমতো হয়। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে ফলের রস মুখের ব্যথা কমতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্বর থাকলে নির্দিষ্ট মাত্রার প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন দেওয়া ঠিক হবে না। এর বাইরে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের দরকার নেই। তবে এ রোগ প্রতিরোধে শিশুদের বারবার ভালো করে হাত ধোয়া শেখাতে হবে। হাঁচি-কাশির শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ঘর, ঘরের মেঝে, খেলনা পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখের ভেতর হাত ঢোকানোর অভ্যাস দূর করতে হবে এবং ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!