পাঁচ মাসেই ‘কোটিপতি’ বন্দরের এস্টেট কর্মকর্তা, দুদকে অভিযোগ

‘ঘুষ’ ছাড়া হয় না ফাইল প্রসেসিং

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের জেটি (জাহাজ ভিড়বার ঘাট) নির্মাণের উদ্যোগ নিতে একটি আবেদন জমা পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবরে। সেই ফাইল প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব যায় বন্দরের এক ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) কর্মকর্তার হাতে। ওই কোম্পানির জেটি করার আশ্বাস দিয়ে অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ চান এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে সমুদ্র কিনারায় স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নগরের পতেঙ্গার নেভালে থাকা বে-ওয়ান ক্রুজ জাহাজটি সরানোর বিষয়েও কালক্ষেপণ করে তিনি পকেট ভারী করেন।

এভাবে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির ফাইল প্রসেস ও কোম্পানির এস্টেট বিভাগের অনুমোদন বিষয়ে সমস্যা সমাধানের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অল্প সময়েই গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় তিনি গড়েছেন বাড়ি। এছাড়া নামে-বেনামে রয়েছে আরও বিভিন্ন সম্পদ। তবে তিনি এসব অবৈধ কাজের বেলায় সমস্ত লেনদেন করা তার ছোট ভাইকে দিয়ে।

অভিযুক্ত ওই বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) হলেন মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন। গত ২০ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগের পাহাড় জমা পড়েছে। আর এই অভিযোগ করেছেন বন্দরের এক কর্মচারী।

ওই অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং বন্দরের এনএসআইয়ের উপপরিচালক দপ্তরে।

দুদকে দেওয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে তিনি বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এর আগে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ সহকারী ব্যবস্থাপক (ভূমি) পদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চাকরিতে যোগ দেন মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন।

‘ঘুষ’ ছাড়া হয় না ফাইল প্রসেসিং
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারি এলাকায় সমুদ্রঘেঁষা দুই হাজার কানি জায়গা রয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের। সেখানে দুই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ওই কোম্পানি জেটি করতে আবেদন করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাবরে। কাজটির ফাইল প্রসেসিং কাজের দায়িত্ব পড়ে ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিনের ওপর। নানা টালবাহানা ও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভাটিয়ারীর সমুদ্র তীরে ওই কোম্পানির জেটি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চান তিনি।

এছাড়া ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির দিকে চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলায় এসএ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেটি এবং স্লিপ ওয়্যার ভাড়া কমানোর জন্য ফাইল প্রসেস করতে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এই ফাইলটি প্রসেসের দায়িত্ব পড়ে শিহাব উদ্দিনের কাছে। সেখানে ওই কোম্পানি থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে কাজ করে দেন তিনি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পশ্চিম গোমদন্ডী বোয়ালখালী মেসার্স কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের জেটি অনুমোদনের ফাইল প্রসেসিংয়ের জন্য যায় বন্দর এস্টেট বিভাগে। সেটির কাজ বাস্তবায়নে প্রধান দায়িত্বে ছিলেন বন্দরের ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন। বর্তমানে জেটির অনুমোদন এখনও আসেনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে। কাজটি করতে শিহাব উদ্দিন ঘুষ নিয়েছিল ১০ লাখ টাকা। এসব লেনদেন করেন তার ভাইকে দিয়ে।

একই বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে এমইবি ইন্ডাস্ট্রিজ কমপ্লেক্স লিমিটেড ও ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে ফাইল নবায়নের কাজ আটকে ছিল। ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন ওই কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ লাখ নিয়ে ফাইল নবায়নের কাজ ঠিকঠাক করে দেয়। এই দুই প্রতিষ্ঠানই ইলিয়াস ব্রাদার্সের।

বে-ওয়ান ক্রুজ না সরাতে বড় লেনদেন
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সমুদ্র কিনারায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেয়। সেই মোতাবেক কাজ না করে বড় অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে পতেঙ্গা নেভালে সমুদ্র তীরে অবস্থিত বে-ওয়ান ক্রুজের মালিক প্রকৌশলী আবদুর রশিদের জাহাজটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন। বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে জাহাজটি দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই রাখা আছে।

জানা গেছে, শিহাবের হয়ে টাকার লেনদেন করেন তার আপন ছোট ভাই। তার ছোট ভাইকে হাফেজ নামে চেনেন সবাই। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে শিহাব গ্রামে গড়েছেন বড় ভবন। নামে-বেনামে বানিয়েছেন বিপুল সম্পদ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি সৎভাবে কাজ করছি। তাই আমার পেছনে কিছু লোকজন এসব অপপ্রচার করছেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!