চট্টগ্রামে চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর ডেন-৩, শুরুতেই রক্তক্ষরণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে ডেন-৩ ও ডেন ৪ ধরনটাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ডেঙ্গু রোগীদের রক্তক্ষরণ হয়। আর তাতে রোগীর হয়ে পড়ে জীবন সংকটাপন্ন।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞের অভিমত, ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে— ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। ২০১৮ সালের পর ডেঙ্গুর ডেন-১ ধরনে মানুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি। ২০২১ সালে সব মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩ ধরনে। কিন্তু এই বছর ডেন-৪ ধরনের প্রকোপ তুলনামূলক অনেক বেশি। আবার ডেন-৩ ও ডেন-১ ধরনেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গুর তিনটি ধরন দেশে এখন সক্রিয়। তবে চট্টগ্রামে ডেন-৩ ও ডেন-৪ ধরনটি বেশি সক্রিয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে একলাফেই চট্টগ্রাম নগরীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬৪ জন ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৭ জন। অপর ২৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রামে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৩ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ জন, মহিলা ৬ জন আর শিশু ৪ জন। ১৫ অক্টোবর নুসরাত নামের নয় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর দুই দিন আগে ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেলে খুলশীর ওই শিশুটিকে ভর্তি করানো হয়েছিল।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে এক হাজার ১৬৫ জন ও জেলায় আক্রান্ত ৪১৮ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হন ৬০১ জন। অন্যদিকে চলতি অক্টোবরের ১৬ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৮ জন।

জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা জ্বরের ৩ থেকে ৪ দিনের মাথাতেই সচরাচর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা তাদের সাতদিনের আগে ছাড়ছেন না। অনেক সময় ১০ দিনও রাখছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩, ১৪, ১৬ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবারও (১৭ অক্টোবর) ১৪ নং মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের কয়েকজনের অবস্থা ভালো নয় বলে জানা গেছে।

১৪ নং মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ও ডেঙ্গুর ফোকাল পারসন এসএম আসাদুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর ১০টা ওয়ার্নিং সাইন থাকে। এ সাইনগুলো প্রকাশ পেলেই আমরা ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে নেই।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে ডেন-৩ ধরনটাই চলছে। ডেন-৪ও দেখা যাচ্ছে।’

ডেঙ্গুর ডেন-৩ এর ধরন বলতে গিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘এ ধরনের রোগীদের খারাপ লক্ষণ হলো, রোগীর রক্তক্ষরণ হয়। পায়খানা কালো হয়। এখন আমরা ডেন-৩ ধরনের রোগীই বেশি পাচ্ছি। কারণ এ ধরনের মধ্যে পড়া ডেঙ্গু রোগীদের খারাপ লক্ষণের মধ্যে প্রথমেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’

নারী ও শিশুর বেশি মৃত্যু নিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘নারীরা বিশেষ করে গৃহিণীদের যখন জ্বর আসে, এটাকে ভাইরাল ফেভার মনে করে তারা পাত্তা দেয় না। জ্বর নিয়ে সংসারের সব কাজই করতে থাকে। কিন্তু যখন ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে তখনও চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না। যখন যায়, তখন অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে শিশুদের তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ডেঙ্গুর ধকল ছোট্ট শরীর আর কুলাতে পারে না।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!