চট্টগ্রামে ঘরে থাকা ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নেই সিভিল সার্জন অফিসে, কমছে পরীক্ষা

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সঠিক তথ্য নেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। শুধুমাত্র যেসব রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের তথ্যই রয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর যেসব রোগী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কোনো হিসেব নেই। এমনকি এসব রোগীর মধ্যে কেউ মারা গেছেন কিনা, সেটাও জানা নেই প্রতিষ্ঠানটির।

প্রতিদিন শুধুমাত্র সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং মারা যাওয়া রোগীদের তথ্য দিচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এতে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত রোগীর সঠিক সংখ্যা অজানায় থেকে যাচ্ছে।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বেশিরভাগ জ্বর আক্রান্ত রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তও হয়েছে এই মাসটিতে। তবে গত কয়েকদিনে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন নগরীর একাধিক ল্যাবের কর্মরতরা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৮০ জন রোগী ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসেন। এদের মধ্যে পজিটিভ হন শতকরা ১১ থেকে ১৩ ভাগ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান অরিজিৎ দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ জনের মধ্যে, ডেঙ্গু টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসছে ২০ থেকে ২৫ জনের। সপ্তাহখানেক আগে পরীক্ষা হতো প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ জনের। এর মধ্যে পজিটিভ আসতো ৪০ থেকে ৪৫ জন।’

এপিক হেলথ কেয়ারের ল্যাব ইনচার্জ আবু নাসিম নেজামী বলেন, ‘আগে গড়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি ডেঙ্গু টেস্ট হতো। এনএস১ পজিটিভ আসতো শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। আর এখন পরীক্ষা হচ্ছে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ জনের, পজিটিভ আসছে ২০ থেকে ২৫ জন।’

এদিকে চট্টগ্রামভিত্তিক এক ফেসবুক পেইজের পোস্টে অনেকে ঘরে বসে ডেঙ্গু চিকিৎসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

সেই পোস্টের কমেন্টে জান্নাতুল লায়লা নামে একজন লিখেছেন, ‘আমার এবং আমার ছোট মেয়ের হয়েছিল। জ্বর হওয়ার পর টেস্ট করিয়েছিলাম। এরপর ডাক্তার দেখিয়ে ডাক্তার এর পরামর্শে চলেছিলাম। কোনো ওষুধ দেয়নি। বিশ্রামে ছিলাম আর তরল খাবার বেশি বেশি খেয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে আমার মেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়, আমার সুস্থ হতে সময় লেগেছিল। আর শরীর তো প্রায় দেড় মাসের উপর দুর্বল ছিল।’

এমডি ফোরকান নামের একজন লিখেছেন, ‘ডেঙ্গু রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো রেস্ট। বেশি স্যালাইনের পানি, ডাবের পানি, মালটার রস খান। ইনশাআল্লাহ বাসায় থেকে সুস্থ হবেন।’

সুলতানা বেনজির নিজাম নামের একজন লিখেছেন, ‘আমার ভাইয়ের হয়েছিল ডেঙ্গু। আমরা ভয়ে ভর্তি করাইনি। ঘরে ছিলো একদম রেস্টে। সারাক্ষণ মশারির মধ্যে ছিল। স্যালাইন আর একদিনে কমপক্ষে ২টা ডাবের পানি মাস্ট। আর বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি। কোনো না কোনো ফল। সারাদিন খাওয়ার জন্য তাগাদা দিতে হতো, কারণ কোনো রুচি থাকে না খাওয়ার। চারদিন টানা CBC টেস্ট করিয়ে প্লাটিলেট চেক করছিল। যখন প্লাটিলেট কমতে থাকে তখন পেঁপে পাতার রসও খাইয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে সাতদিনে সুস্থ হয়েছিল। তবে অনেক দিন দুর্বল ছিল। ১৪ থেকে ১৫ দিন বাড়িতেই ছিল। রেস্টে ছিল।’

হোসেন মীম নামের একজন লেখেন, ‘যতটা সম্ভব পানি খাবেন ২-৩ লিটার। স্যালাইনের পানি, ডাব, দুধ, স্যুপ, ফল খেয়ে যান। খাওয়ার রুচি থাকে না কিন্তু এগুলাই ওষুধ মনে করে খেতে হবে। যতদিন প্লাটিলেট স্ট্যাবল হবে না, তরল খাবেন শুধু।’

বিপ্লব বসু নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আমারও ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছিল। রেস্ট নিয়েছি আর ডাবের পানি। আর একটা কথা, যত পারেন কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে খান এবং যদি সহ্য করতে পারেন কাঁচা পেঁপে পাতার রস খান। এটা প্লাটিলেট বাড়াতে খুব সাহায্য করে। তাই কোনো ভয় নাই। বিশ্রাম নিন ভালো হয়ে যাবেন।’

ঘরে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর হিসেব না রাখা প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে বিষয়টি দুঃখজনক হলেও সত্য, যেসব ডেঙ্গু রোগী ঘরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের হিসেব সিভিল সার্জন অফিসে নেই। আমরা যেসব রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের হিসেব রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আদতে কতজন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়েছিল কিংবা হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব আমাদের কাছে নেই। আর তা রাখাটাও পসিবল না। এটি নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথাও নেই। আমাদের দুশ্চিন্তা, যেসব রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের নিয়ে।’

তবে চট্টগ্রামে দু’দিন পর আবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই নারীর নাম জাহানারা সিদ্দিকা (৩০)। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ার মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী।

এনিয়ে চট্টগ্রামে চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৫ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন। চলতি বছরে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৮০২ জন।

রোববার (১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!