চট্টগ্রামে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, তিনগুণ বেশি দিতে বাধ্য যাত্রীরা

চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত বাস ভাড়া ছিল ১২ টাকা। করোনাকালে পুনর্নিধারিত গণপরিবহন ভাড়া ৬০ শতাংশ ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৬০ পয়সা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। যদিও পুনর্নিধারিত গণপরিবহন ভাড়া জনগণের জন্য বাড়তি বোঝা হলেও সঙ্গত কারণে যাত্রীরা তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু যাত্রী কমের অযুহাতে গণপরিবহন চালক-হেলপাররা আদায় করছে দ্বিগুণ-তিনগুণেরও চেয়ে বেশি ভাড়া।

যাত্রীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম যাত্রী পরিবহনের কথা বলে ভাড়া বাড়ানোর পর যাত্রী কম এমন যুক্তিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও দ্বিগুণ আদায় মানা যায় না।

১ জুন থেকে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে সারাদেশের মত চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। তবে যথাযথ নজরদারির অভাব, চালক, হেলপারের আইন না মানার প্রবণতার কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ভাড়া নৈরাজ্য। কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চালক, হেলপারদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, সীমিত পরিসরে যানবাহনে সিটের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও অফিস টাইমে যাত্রী নিয়ে যানবাহন ভর্তি করে ফেলেছেন হেলপার। মানছেন না কোন স্বাস্থ্যবিধি। কিন্তু ভাড়ার আদায়ের বেলায় নির্ধারিত ভাড়ায় চেয়ে দ্বিগুণ আদায় করছে। যাত্রীদের অভিযোগ ভাড়ার বেলায় যাত্রী কম ও আইনের অযুহাত। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির বেলায় কেন উল্টো।

তাদের মতে, এমনিতে গণপরিবহন শ্রমিকদের আইনা না মানার প্রবণতা রয়েছে। তারওপর গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ফলে সাধারণ যাত্রীরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। করোনায় দীর্ঘ দুইমাস কর্মহীন মানুষের কাছে যেখানে বর্ধিত ভাড়া বোঝা সেখানে চালক, হেলপারের স্বেচ্ছাচারিতায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা অমানবিক। দ্রুত এই ভাড়া নৈরাজ্যের লাগাম টানা উচিত।

নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় ইপিজেডের একটি পোশাকশিল্পের কর্মী রবিউল, রকি, হাসনা, রিনাসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানান, আমরা সীমিত বেতনে চাকরি করি। এই সামান্য বেতনে পরিবার, ঘর ভাড়াসহ সবকিছু চালাতে হয়। গণপরিবহন ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও হেলপারেরা ইচ্ছেমত দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছেন। এমনিতে বাড়তি ভাড়া আমাদের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে চালক, হেলপারের দ্বিগুণ ভাড়া আদায় অযৌক্তিক।

তারা বলেন, প্রতিবাদ করলে যাত্রী কম তাই বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন এমন অযুহাত তোলেন অথবা গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে হেলপাররা, চালকের প্রায় তর্ক জুড়ে দেন। অনেক সময় চালক-হেলপারের সাথে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

তবে এসব অভিযোগ আমলে নিতে রাজি নয় চালক-হেলপার। চালক হেলপারদের মতে, কোন যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়না। অফিস টাইম ছাড়া রাস্তায় তেমন মানুষ না থাকায় যাত্রী কম হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে ২-৩ টাকা এদিক সেদিক হতে পারে।

তবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর কেন বেশি ভাড়া নিতে হবে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান চালক-হেলপার।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরের জামান বলেন, প্রজ্ঞাপনের বাইরে বাড়তি ভাড়া আদায় এটা সরাসরি সরকারি নির্দেশনার লংঘন ও অপরাধ। এটি যাত্রীদের উপর বাড়তি চাপ। প্রজ্ঞাপনে নির্দেশিত ভাড়া হারের চেয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ সব ধরনের ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানে যানবাহন জব্দ ও জরিমানা করছি।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে পারবে না। এজন্যে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে যারা অনিয়ম করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। যেখানেই এ ধরনের অনিয়ম দেখা যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন লকডাউনে কর্মহীন মানুষ এমনিতেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সেখানে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি বাস ভাড়া আদায় ডাকাতির সামিল।

তিনি বলেন, গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আগেও সরকারের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করত। এখন তা আরও বেশি করে করার সুযোগ সৃষ্টি হল। ভাড়া নৈরাজ্যে রোধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!