চট্টগ্রামের রান পাহাড় পাড়ি দিতে পারেনি ঢাকা প্লাটুন

রেকর্ড চারশ রানের ম্যাচ, বিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর চট্টগ্রামের

ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিশ্চয়ই আফসোস করছিলেন-টস জিতে চট্টগ্রামকে ব্যাটিং না দিয়ে নিজেরা নিলেই ভালো হতো! টসে জিতে চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ জানান মাশরাফি। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ওপেনার লিন্ডল সিমন্স। আর সেই যে ব্যাটিং ঝড় শুরু হলো, সেটা যখন থামল ততক্ষণে ২০ ওভারে তাদের ইনিংস পৌঁছে গেছে ৪ উইকেটে ২২১ রানের পাহাড়ে। তাতে ওপেনার লিন্ডল সিমন্সের অবদান ৩৬ বলে ৫৭। আরেক ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দো ১৩ বলে ২৬, ইমরুল কায়েস ২৪ বলে ৪০ আর ইনজুরি নিয়ে দলকে টেনে নেয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২৮ বলে ৫৯। শেষে চ্যাডউইক ওয়ালটন ১৮ বলে অপরাজিত ২৭ রান। ফলাফল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের স্কোর বঙ্গবন্ধু বিপিএলের চলতি আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এবং বিপিএলের ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।

২০ ওভারে ২২১ রানের পাহাড় ডিঙানো যে কোনো বিচারে খুবই কষ্টসাধ্য। তবে ঢাকা প্লাটুন ঠিকই ছুটল পাহাড়সম সেই টার্গেটের পেছনে। তিসারা পেরেইরা ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ব্যাটিংয়ে ঝলক দেখিয়ে ছক্কার ঝড় তুললেন। কিন্তু লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে পারলেও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ২২১ রান টপকাতে পারল না ঢাকা প্লাটুন। থেমে গেল তাদের ইনিংস ২০৫ রানে। চট্টগ্রাম ম্যাচ জিতল ১৬ রানে। চট্টগ্রামের ২২১ রানের জবাবে ঢাকার ২০৫ রান। ম্যাচে মোট রান হলো ৪২৬ রান। বিপিএলের ইতিহাসে কোনো ম্যাচে দু’দলের মিলিয়ে এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

শেষ ৩৬ বলে ম্যাচ জিততে ঢাকার প্রয়োজন দাঁড়ায় ৮২ রান। এমন সময় উইকেটে মাশরাফি বিন মর্তুজা। উইকেটে এসেই ঢাকার অধিনায়ক ব্যাট হাতে যা করলেন তাতেই নার্ভাস পুরো চট্টগ্রাম! নাসিরের ওভারের প্রথম তিন বলে ছক্কা হাঁকালেন মাশরাফি। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি। পঞ্চম বলেও ছক্কার জন্য বল ভাসালেন মাশরাফি। কিন্তু বাউন্ডারির দড়ির কাছে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ইমরুল কায়েস ক্যাচটা নিলেন। ৬ বলে ২৩ রান করা মাশরাফি ফিরলেন। তখনো তিসারা পেরেইরা উইকেটে। এবং ম্যাচে টিকে ছিল ঢাকা বেশ ভালোভাবেই।

একপ্রান্ত থেকে পেরেইরা ঠিকই ছক্কার পর ছক্কা হাঁকান। ১৮ বলে ৪২ রানের প্রয়োজন একসময় কমে দাঁড়ায় ১২ বলে ৩৪ রানে। ১৯ নম্বর ওভারে পেরেইরা আরো দুই ছক্কা হাঁকিয়ে টার্গেট কমিয়ে আনেন। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ঢাকার চাই ২১ রান।

তিসারা পেরেইরা স্ট্রাইক নেন। ম্যাচের শেষ ওভারটা করতে এলেন মেহেদি হাসান রানা। প্রথম বলে ঝুঁকি নিয়ে দুই রান নিলেন। পরের দুই বলে বাউন্ডারি বা ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। সিঙ্গেল রান ছিল। কিন্তু নিলেন না। তৃতীয় বলে আবার দুই রান। শেষ দুই বলে টার্গেট দাঁড়াল ১৭ রান। চতুর্থ বলেও একরানের বেশি নেওয়ার সুযোগ ছিল না তার সামনে। তাই সেই রানও নিলেন না। শেষ বলে মেহেদি ঠিকই তুলে নিলেন তার শিকার তিসারা পেরেইরাকে। ২৭ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ৪৭ রান করলেন এই শ্রীলঙ্কান।

এর আগে চট্টগ্রামের ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম ওভার করেন ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি। সেই ওভার থেকে লিন্ডল সিমন্স তুলেন ১২ রান। অন্যপ্রান্তে আবিস্কা ফার্নান্দোও ছক্কা-চারের ঝড় তুলেছেন। পাওয়ার-প্লে শেষ হতে চট্টগ্রামের স্কোরবোর্ডে রান দাঁড়াল ১ উইকেটে ৭৪। শুরুর ১০ ওভারে দলের স্কোর তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে গেল। মারমার কাটকাট এই ব্যাটিং পরের দশ ওভারেও বজায় রাখল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নিজ মাঠে পেয়ে ঢাকা প্লাটুনের বোলিং স্রেফ তুলোধুনো করে ফেলল চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামের হয়ে ঝড়ের সূচনা করেন ওপেনার লেন্ডল সিমন্স। তার ফিফটির পর মাহমুদুল্লাহর হারিকেন গতির ফিফটিতে চট্টগ্রাম পায় বিপিএল ইতিহাস সর্বোচ্চ ২২১ রান। ছবি: আজীম অনন
চট্টগ্রামের হয়ে ঝড়ের সূচনা করেন ওপেনার লেন্ডল সিমন্স। তার ফিফটির পর মাহমুদুল্লাহর হারিকেন গতির ফিফটিতে চট্টগ্রাম পায় বিপিএল ইতিহাস সর্বোচ্চ ২২১ রান। ছবি: আজীম অনন

প্রথম সাত ওভারে চট্টগ্রামের সঞ্চয় দাঁড়াল ১ উইকেটে ৮৪ রান। ১০ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় এলো এই রান। লিন্ডল সিমন্স মাত্র ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরি করলেন। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে সিমন্স রান আউট হয়ে ফিরলেন ৫৭ রানে। ইনিংসের বাকি সময়ে যারাই ব্যাট করতে এলেন তারাই ব্যাটিংয়ে তাণ্ডব চালালেন। ইমরুল কায়েসের জন্য চলতি টুর্নামেন্ট দুর্দান্ত কাটছে। ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছেন এই বাঁ-হাতি। ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় এই ম্যাচেও করলেন ২৪ বলে ৪০ রান। তবে স্ট্রাইক রেটে দলের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন অধিনায়ক মাহমুদল্লাহ রিয়াদ। সিমন্সের মতো ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরি পেলেন তিনি। ১৮ নম্বর ওভারে যখন আউট হয়ে ফিরছেন তখন তার নামের পাশে ২৮ বলে ৫৯ রানের ঝলমলে ইনিংস শোভা পাচ্ছে। ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় এই রান করেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক।

বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ

১. রংপুর রাইডার্স – ২৩৯/৪ বনাম চিটাগাং ভাইকিং (২০১৯)
২. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস – ২৩৭/৫ বনাম খুলনা টাইটানস (২০১৯)
৩. চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স – ২২১/৪ বনাম ঢাকা প্লাটুন (২০১৯)
৪. ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস – ২১৭/৪ বনাম রংপুর রাইডার্স (২০১৩)
৫. চিটাগাং ভাইকিংস – ২১৪/৪ বনাম খুলনা টাইটানস (২০১৯)

চট্টগ্রামের ইনিংসের শেষের দিকে ঝড় তুললেন আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান-চ্যাডউইক ওয়ালটন। ১৮ বলে তার যোগাড় অপরাজিত ২৭ রান। শেষ দুই ওভারে চট্টগ্রাম যেন পিটিয়ে ছাতু বানাল ঢাকার বোলিংকে। শেষ এই দুই ওভারে রান উঠল ৪৩! আর তাতেই স্কোরবোর্ডে পেটমোটা ২২১ রানের সঞ্চয়! সবমিলিয়ে ২৩ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কার ইনিংস এটি।

দারুণ উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচের শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করলেন মেহেদি। সেই সঙ্গে শেষ বলে তুলে নিলেন পেরেইরার প্রাইজ উইকেট। ম্যাচে ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট শিকার করে মেহেদি তুলে নেন টানা দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২২১/৪ (২০ ওভারে, সিমন্স ৫৭, আবিস্কা ফার্নান্দো ২৭, ইমরুল ৪০, মাহমুদল্লাহ ৫৯, ওয়ালটন ২৭*; হাসান মাহমুদ ২/৫৫)।
ঢাকা প্লাটুন: ২০৫/১০ (২০ ওভারে, মমিনুল ৫২, জাকের আলী ২৭, তিসারা পেরেইরা ৪৭, মাশরাফি ২৩; মেহেদি হাসান রানা ৩/২৩)।
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান রানা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!