সাতকানিয়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সবজি বিক্রেতা আহত

ছাত্রলীগ যুবলীগ দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাবের হোসেন (২৭) নামের এক সবজি বিক্রেতা আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের পশ্চিম ডলুখতি পুকুরপাড় জামে মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ছাবের হোসেন দক্ষিণ আমিলাইষ এলাকার আবদুন নবীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে আমিলাইষ ইউনিয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরমানের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের রাতে পশ্চিম ডলু মাঝের পাড়ায় স্থানীয় কিশোররা চড়ুইভাতির আয়োজন করে। এ আয়োজনে স্থানীয় কিশোররা সাউন্ডবক্সে অশ্লীল গান বাজালে স্থানীয় ইউপি সদস্য তাদের গান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় কিশোররা জেদ করে সাউন্ডবক্সের ভলিয়ম আরও বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য সাউন্ডবক্স ও মাইক চালককে থাপ্পড় দেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আরমানসহ তার পক্ষের লোকজন স্থানীয় ওই ইউপি সদস্যকে লাঞ্ছিত করেন।

ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি অশ্লীল গান বাজাতে নিষেধ করলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমানের ছোটভাই যুবলীগ নেতা আরমানসহ মহিউদ্দিন, হেলাল ও আছহাব উদ্দিন আমাকে কিলঘুষি ও লোহার টর্চ দিয়ে মারধর করে।’

এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মান্নানের বাড়ির সামনে জিয়াউর রহমানের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাত-আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ওই সময় সবজি বিক্রেতা ছাবের হোসেন বাড়ি যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতকানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত ছাবের এলাকায় আরমানের বড়ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমানের পক্ষের লোক বলে পরিচিত।

আমিলাইষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি কেন এসব কাজ করতে যাব। আসলে বিষয়টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে আড্ডা দেন এবং বিভিন্ন অপকর্ম করেন। তার ধারাবাহিতকায় মঙ্গলবার কেরানীহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত নিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আমরা প্রতিহত করার জন্য বের হলে বহিরাগতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।’

সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি কখনো এলাকায় বহিরাগত নিয়ে আসিনি। আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। আমি এলাকায় অস্ত্রবাজি করেছি এ ধরনের কোনো নজির নেই। তবে এলাকায় কোনো অপকর্ম হলে আমি প্রতিবাদ করেছি। যার জন্য তারা আমাকে সহ্য করতে পারছেন না। মঙ্গলবার রাতে মূলত জিয়াউর রহমানের লোকজন আমাকে মারতে এসেছিল।’

আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম হানিফ বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের জেরে মঙ্গলবার রাতে এলাকায় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। ওই রাতেই একজন সবজি বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১২টায় আমিলাইষের পশ্চিম ডলু এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। তবে কাদের গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন তা জানা যায় নি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!